“কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্যকে যদি কার্বন ক্যাপচার টেকনোলজি দিয়ে থামানো যায়, সেটিকেও ক্লিন এনার্জি বলা হয়েছে। কিন্তু এটি কি করে ক্লিন হয়?” প্রশ্ন গোলাম মোয়াজ্জেমের।
Published : 23 Mar 2023, 10:51 PM
নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার খসড়ায় পরিবেশবান্ধব ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানির উৎপাদন বাড়াতে আগের তুলনায় সুস্পষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি।
সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, “মূল নীতির চাইতে এটি আরও বেশি বিস্তারিত এবং সমৃদ্ধ। তবে একই সঙ্গে মূল এবং খসড়া নীতির কিছু সিদ্ধান্তে বিপরীতমুখী অবস্থান রয়েছে।
“২০০৮ সালের সেই নীতিতে রিনিউয়েবল এনার্জি পোর্টফোলিও স্ট্যান্ডার্ড মাঝারি মানের ছিল, স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং-এর অভাব ছিল, রিনিউয়্যাবল এনার্জি ফিন্যান্সিং নিয়ে তেমন বড় আলোচনা ছিল না, গ্রান্ড সাবসিডিজ নিয়ে হালকা ধরনের আলোচনা ছিলো, নেট-মিটারিংয়ের আলোচনাগুলো সেখানে ছিল না। ফলে আমাদের বলার বিষয়টা হলো যে- সেই সময় যে পলিসিটা তৈরি হয়েছিল, তাতে অনেকগুলো দুর্বলতা ছিল।”
বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে সিপিডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে নীতিমালার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “বর্তমান খসড়া নীতিতে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। স্পেসিফিক টাইম পিরিয়ড রয়েছে (১০ বছর ধরে বাস্তবায়ন হবে)। রুফটপ সোলার, নেট মিটারিং, উইদাউট নেট মিটারিং, মিনি গ্রিড, ন্যানো গ্রিড, সোলার ইরিগেশন, চার্জিং স্টেশন, স্ট্রিট লাইটে রিনিউয়্যাবল এনার্জি, ড্রিংকিং ওয়াটারের ক্ষেত্রে কিভাবে হিটিং সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে, ফ্লোটিং সোলার সিস্টেম, পিভি পাম্পিং সিস্টেম- এ রকমভাবে বিস্তারিত বলা আছে।
“কনসেপচুয়াল জায়গাগুলোতে এখানে অনেক বিস্তারিত দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। একইভাবে উইন্ড এনার্জির ক্ষেত্রেও অন-শো’র অফ-শো’র পাশাপাশি সোলার উইন্ড হাইব্রিডের কথাও বলা হয়েছে। বায়োমাস এনার্জি, বায়োফিউয়েলের কথা বলা হয়েছে। আবার রিনিউয়্যাবল এনার্জির নতুন উৎস যেমন- জিওথার্মাল এনার্জি, টাইডাল এনার্জি, ওয়েভ এনার্জি, রিভার কারেন্ট, হাইড্রোজেন এনার্জি, এগুলোর কথাও বলা হয়েছে।”
সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, “প্রথম দফায় ২০২৫ এর ভেতর ১০ শতাংশ, ২০৩০ এর ভেতর ২০ শতাংশ এবং ২০৩০-২০৪০ এর ভেতর ৪০ শতাংশ এনার্জি টার্গেট দেওয়া হয়েছে।
“আমি যদি ৪০ শতাংশের সাপেক্ষে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাই, তবে ২০৩০-২০৪০ এর ভেতর তারা আসলে ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ টার্গেট করছে এই পলিসির অধীনে- যা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
'নতুন নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ২০২২ (খসড়া): এটি কি পরিচ্ছন্ন জ্বালানির লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে?' শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্লিন এনার্জি হিসাবে বিবেচনার সমালোচনা করা হয়।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “খসড়া সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা বা আইইপিএমপির খসড়ায় যেভাবে ক্লিন এনার্জিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, সেখানে যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্যকে যদি কার্বন ক্যাপচার টেকনোলজি দিয়ে থামানো যায়, সেটিকেও ক্লিন এনার্জি বলা হয়েছে। কিন্তু এটি কি করে ক্লিন হয়?”
সরকার নবায়নযোগ্য উৎস থেকে যে হারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছিল, তা অনেকাংশেই বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। মোট উৎপাদনের ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ ‘ক্লিন এনার্জি’ থেকে আসার কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। ২৬ হাজার মেটাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে ‘ক্লিন এনার্জি’ আছে ৭০০ মেগাওয়াটের কিছু বেশি। এর মধ্যে সৌর বিদ্যুতের পরিমাণ ১০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি।
নতুন নীতমালায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল সরকারি প্রতিষ্ঠান স্রেডাকে যথাযথ ক্ষমতায়ন করা হয়নি উল্লেখ করে সিপিডির গবেষণা পরিচালক মোয়াজ্জেম বলেন, “রিনিউয়েবল এনার্জির ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর একটা সংস্কার দরকার। খসড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই পলিসিতে স্রেডাকে মুখ্য ভূমিকায় রাখা হয়নি।
“এখন ১০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন স্রেডা দিতে পারে। কিন্তু আমরা মনে করি স্রেডাকে এখন রিনিউয়েল এনার্জির মূল দায়িত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে ১০০ মেগাওয়াট, ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনুমোদনের ক্ষমতা স্রেডাকে দিতে হবে। স্রেডা হওয়া উচিত নবায়নযোগ্য জ্বালানির ফোকাল পয়েন্ট।”