২০২৩ সালের জন্য ৫৪ লাখ টন জ্বালানি তেল কেনার উদ্যোগ

২০২১-২০২২ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৬৭ লাখ টন জ্বালানির প্রয়োজন হয়েছিল; এই চাহিদা প্রতিবছরই ৭ থেকে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2022, 11:17 AM
Updated : 19 Oct 2022, 11:17 AM

আগামী ২০২৩ সালের জন্য আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৫৪ লাখ ৬০ হাজার টন জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাবে সবুজ সংকেত দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। 

বুধবার কমিটির সাপ্তাহিক বৈঠকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রাহাত আনোয়ার। 

১৬ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এবং ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির আলাদা দুটি প্রস্তাব এদিন বৈঠকে তোলে বিপিসি। 

বৈঠক শেষে অতিরিক্ত সচিব রাহাত আনোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ২০২৩ সালের জন্য সৌদি আরামকো এবং আবুধাবির কোম্পানি এডনকের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ১৬ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। 

আরেক প্রস্তাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জিটুজি ভিত্তিতে ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আমদানির প্রস্তাবও নীতিগত অনুমোদনের সুপারিশ করেছে মন্ত্রিসভা কমিটি। 

ইউক্রেইন রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম দীর্ঘদিন ধরে ঊর্ধমুখী থাকায় তা সারাবিশ্বে অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের আশেপাশে ঘুরাফেরা করছে। যুদ্ধের আগে এই দাম ৬০ থেকে ৭০ ডলারের মধ্যে ছিল। 

রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি বিপিসির হিসাবে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৬৭ লাখ টন জ্বালানির প্রয়োজন হয়েছিল। এই চাহিদা প্রতিবছরই ৭ থেকে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। 

মোট চাহিদার মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টন জ্বালানির যোগান আসে ওই বছর। সরকারি পরিশোধন কোম্পানি ইস্টার্ন রিফাইনারিতে বছরে ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি পরিশোধন করার সক্ষমতা রয়েছে। 

টিসিবির কেনাকাটায় কিছুটা সাশ্রয় 

এদিন সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আলোচ্যসূচির মধ্যে ছিল রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবির জন্য পণ্য কেনার তিনটি প্রস্তাব এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন- বিএডিসির জন্য সার কেনার দুটি প্রস্তাব। 

অতিরিক্ত সচিব জানান, মেঘনা এডিবল অয়েলের কাছ থেকে উন্মুক্ত দরপত্রের ভিত্তিতে ১৮৯ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। 

এতে প্রতি লিটার তেলের দাম পড়বে ১৭১ টাকা ৮৫ পয়সা, যা আগের কেনাকাটায় ১৮৫ টাকা ছিল। অর্থাৎ দাম কমে আসায় লিটারে ১৪ টাকা করে সাশ্রয় হবে। 

আরেকটি ক্রয় প্রস্তাবে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সুপার অয়েল রিফাইনারির কাছ থেকে ৮৭ কোটি ৯৭ লাখ ২৫ হাজার টাকায় ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি লিটার তেলের দাম পড়েছে ১৫৯ টাকা ৯৬ পয়সা; যাতে আগের মূল্যের চেয়ে লিটারে ২৫ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। 

আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে তুরস্কের একটি কোম্পানির কাছ থেকে আট হাজার টন মসুর ডাল ৭০ কোটি ৯৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকায় কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এদিন। প্রতি কেজির দাম দাঁড়াচ্ছে ৮৮ টাকা ৭৩ পয়সা। এর আগের কেনাকাটায় ১১০ টাকা কেজি দরে মসুর ডাল কিনতে হয়েছিল সরকারকে। 

বিএডিসির প্রস্তাবে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশনের কাছ থেকে ষষ্ঠ লটে ৫০ হাজার টন এমওপি সার ৪৩৭ কোটি ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকায় আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। 

বিএডিসির আরেক প্রস্তাবে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় মরোক্কোর ওসিপি এসএর কাছ থেকে নবম লটে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার ৩০২ কোটি ৩৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকায় আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।