গত দুই মাসের বন্যায় বাংলাদেশের ১ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে দুই মাস ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি আদায় না করতে বলেছে এনজিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা- ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
Published : 08 Sep 2014, 05:52 PM
সোমবার দেশে কার্যরত সব এনজিও প্রধানকে পাঠানো এক সার্কুলারে বলা হয়, “বন্যার প্রকোপ, ক্ষতির পরিমাণ, গ্রাহকদের আর্থিক অবস্থা এবং ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে বন্যাকালীন ও বন্যাপরবর্র্তী ন্যূনতম দুই মাস বিদ্যামান ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখতে পরামর্শ দেয়া হলো।”
অন্তর্বর্তী বা দুর্যোগকালীন সময়ে নতুন ঋণ দেয়ার পাশাপাশি চলমান ঋণ পুনঃতফসিল করার ব্যবস্থা নিতেও পরামর্শ দিয়েছে এমআরএ।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বন্যা দুর্গত এলাকায় সহায়তার জন্য ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে একটি সার্কুলার দিয়েছিল।
উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গত দুই মাস ধরে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বন্যা চলছে। আবহাওয়াবিদরা একে বলছেন মৌসুমী বন্যা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের উপ-পরিচালক (মনিটরিং) রফিকুল ইসলাম এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক হিসাবে বন্যায় ১ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে।এসব জমিতে রোপা আমন, বোনা আমন ও আউশ ধান এবং শাক-সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল ছিল।
এরই মধ্যে নদীগুলোতে পানি কমে এসেছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন গত ৪ সেপ্টেম্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পানি আর বাড়ার আশঙ্কা নেই।
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সার্কুলারে বলা হয়, বন্যায় দেশের ১৭ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ঘর-বাড়ি, ক্ষেত-খামার, আবাদি জমি প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন।
“এসব এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির/সঙ্কুচিত হয়ে পড়ায় মানুষের আয়-উপার্জন সীমিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দারিদ্র্য-পীড়িত জনগোষ্ঠীই বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক।”
কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, নেত্রকোনা, সিলেট ও সুনামগঞ্জ সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়।
গ্রাহকদের ঋণ থাকা অবস্থায় শতভাগ সঞ্চয় উত্তোলনের সুবিধা দিতেও এনজিওগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের ‘উদ্বৃত্ত তহবিল’ বা ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল’ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সামর্থ্যহীন গ্রাহকদের জরুরি খাবার ও ওষুধ সরবরাহ এবং বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কাজেও সহায়তা করতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, “কোনো কোনো এনজিও ইতোমধ্যে গ্রাহকদের সহায়তায় নানা ধরনের সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের কাজে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই ১৭ জেলার সব এনজিওকে এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।”
উদ্বৃত্ত তহবিলের অর্থ ব্যবহারসহ এনজিওগুলো বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেবে- তা ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।