আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে কিছুটা কমে এলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার মজুদ ফের ২০ বিলিয়ন (২ হাজার কোটি) ডলার অতিক্রম করেছে।
Published : 20 May 2014, 08:09 PM
গত ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।
৮ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১৭ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
মঙ্গলবার দিন শেষে সেই রিজার্ভ আবার ২০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে ২০ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ ও ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমদানি বাড়ার পরও মূলত রপ্তানি আয় এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর ভর করেই রিজার্ভ ফের ২০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।”
এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসেরও বেশি সময়ের আমদানি দায় পরিশোধ করা সম্ভব বলে জানান ছাইদুর রহমান।
আকুর পরবর্তী আমদানি বিল জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে।
তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে থাকবে বলে আশা করছেন ছাইদুর রহমান।
প্রতি দুই মাস অন্তর আকুর বিল পরিশোধ করে বাংলাদেশ।
মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের বিল শোধ করা হয়েছে ৮ এপ্রিল। মে-জুন মেয়াদের দেনা পরিশোধ করতে হবে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে।
ছাইদুর রহমান বলেন, রপ্তানির পাশাপাশি রেমিটেন্সের প্রবাহও ভালো। চলতি মে মাসের ১৬ দিনেই ৭০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। মাস শেষে রেমিটেন্স ১৩৫ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
“বরাবরের মতই দুই ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠাবেন। তখন রিজার্ভ আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রিজার্ভ ছিল ৬ মে, ২০ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
ভারতের রিজার্ভ স্থিতি ৩১৩ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের ১৩ বিলিয়ন ডলার।
এক বছর আগে অর্থাৎ ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল এর পরিমাণ ছিল ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। এক বছরে রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ৪১ শতাংশ বেড়েছে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। পরে ৫ মার্চ আকুর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ৯৬ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ১৯ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল।
রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ায় ১৯ মার্চ রিজার্ভ আবারো ১৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
এ সময়ে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
“তবে গত তিন-চার মাস ধরে রেমিটেন্সে যে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে আশা করা হচ্ছে অর্থবছর শেষে গত অর্থবছরের সমান রেমিটেন্স দেশে আসবে,” বলেন ছাইদুর রহমান।
২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
ডলার কিনেই চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
এদিকে বাজার থেকে ডলার কেনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবারও ৬ কোটি (৬০ মিলিয়ন) ডলার কেনা হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সব মিলিয়ে বাজার থেকে ৪৬০ কোটি (৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন) ডলার কেনা হল।
গত অর্থবছরের পুরো সময়ে কেনা হয়েছিল ৪৭৯ কোটি ডলার।
ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতেই বাজার থেকে ডলার কেনা হচ্ছে বলে জানান ছাইদুর রহমান।