ব্যাংক থেকে হল-মার্কের ‘আত্মসাৎ’ করা অর্থের অঙ্ক ‘বেশি’ নয় বলে আবার মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
Published : 06 Nov 2013, 05:26 PM
এই ধরনের ঘটনা বিশ্বে বিরল নয় বলেও বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে বিশাল অঙ্কের আর্থিক এই কেলেঙ্কারি নিয়ে সমালোচকদের উদ্দেশে বলেছেন তিনি।
হল-মার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে মন্তব্যের জন্য সমালোচনার মুখে সংসদে দাঁড়িয়ে নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশকারী মুহিত এক বছর বাদে বুধবার সচিবালয়ে আবার তার পুরনো কথা বলেন।
সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মুহিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “দুনিয়ার ব্যাংকিং সেক্টরে সর্বত্রই চুরি-জালিয়াতির ঘটনা ঘটে
“আমি এর আগেও বলেছি, এটা ব্যাংকিং খাতের জন্য এমন কিছু নয়। চার লক্ষ কোটি টাকার ব্যাংকিং খাতের মধ্যে ৪ হাজার কোটি টাকা ‘নাথিং’। অবশ্য এককভাবে সোনালী ব্যাংকের জন্য বড় কিছু।”
হল-মার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে মুহিত গত বছরের সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন,“৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৪ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে।
“এটা নিয়ে আপনারা (সাংবাদিক) অনেক পাবলিসিটি করছেন। এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, মনে হচ্ছে এটা ধসে চলে গেল।”
এই বক্তব্য নিয়ে সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে মুহিত দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন, “চার হাজার কোটি টাকা এমন কিছু না, আমার এই বক্তব্যটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
“আমার এই বক্তব্যের কারণে দুর্নীতি উৎসাহিত হতে পারে। আমি চাই না দুর্নীতি উৎসাহিত হোক। সে জন্য আমি আমার এই বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি এবং বক্তব্যটি প্রত্যাহার করছি।”
গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর দেয়া ওই বক্তব্যের সূত্র ধরে মুহিত বুধবার বলেন, “এর আগেও আমি হল-মার্কের ঘটনা নিয়ে বলেছিলাম, কিন্তু আমার সেই বক্তব্য খণ্ডিতভাবে পত্রিকায় এসেছিল।”
ওই সময় অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করতে গিয়ে ৭৮ বছর বয়সি মুহিতের বয়োজ্যেষ্ঠতার দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছিলেন, “উনার (অর্থমন্ত্রী) বয়স হয়েছে, বুঝি। কথাবার্তা কম বলা ভাল।”
জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ হল-মার্ক গ্রুপের বিরুদ্ধে। ঘটনা প্রকাশের পর ধাপে ধাপে ৪৬০ কোটি টাকা আদায় করেছে ব্যাংকটি।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, হল-মার্ক গ্রুপের সম্পদ মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর মূল্য ১১৭০ কোটি টাকা হবে।
এ সম্পদ সোনালী ব্যাংকের মালিকানায় আনতে হলে মামলা করতে হবে, বলেন তিনি।
কেলেঙ্কারি ফাঁসের পর হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সোনালী বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর ২৭ জনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এক বছর পর গত অক্টোবরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
বুধবারের বৈঠকে সোনালী ব্যাংকের বিনিয়োগ করা সরকারি বন্ডে সুদের হার বাড়াতে মন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, “২২ হাজার কোটি টাকা বন্ডে বিনিয়োগ রয়েছে আমাদের। সুদহার একটি বাড়িয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি আমরা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে ৭ শতাংশ সুদ পান তারা। তাদের দাবির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।”
এছাড়া হল-মার্ক ও আরো কয়েকটি গ্রুপের জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ ‘আত্মসাতের’ কারণে ২৬টি ব্যাংকের সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ১২৫০ কোটি টাকার ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি আটকে রয়েছে।
এ বিষয়টি সুরাহা করার জন্যও মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত সবেচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংকটি।