মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অর্থাৎ, গত বছরের জুন মাসে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, এ বছর মে মাসে তা কিনতে ১০৭ টাকা ৫৬ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
বিবিএস এর তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালের জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশে উঠেছিল। এর পরের সময়টায় তা সাড়ে ৭ শতাংশের মধ্যেই ছিল।
গত বছরের জুন মাসে দেশে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর গত ২০২১-২২ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।
মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, পরের মাসেই তা সাড়ে ৭ শতাংশের ঘর ছাড়িয়ে গেল।
সরকার এ বছর অর্থনীতির এ গুরুত্বপূর্ণ সূচককে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছে। অবশ্য পরিসংখান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে হিসাব প্রকাশ করে, প্রকৃত মূল্যস্ফীতি তার চেয়ে বেশি বলে অর্থনীতিবিদেরা কারও কারও ধারণা।
মহামারীর ধাক্কা সামলে অর্থনীতির গতি বাড়ায় গতবছরের শেষ দিক থেকেই মূল্যস্ফীতি ছিল বাড়তির দিকে। চলতি বছরের শুরুতে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য বাড়তে শুরু করে। তার প্রভাব পড়ে অন্যান্য পণ্যেও।
এই পরিস্থিতিত টানা আট মাস ধরে ৬ শতাংশের বেশি রয়েছে মূল্যস্ফীতির হার। তাতে নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তের সংসার খরচ মেটাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড চাপ পড়ছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খাবারের দাম।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, গত জুন মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়েছে, যা মে মাসে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ ছিল। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
আবার গ্রামের মানুষকে মূল্যস্ফীতির কারণে ভুগতে হচ্ছে শহরের মানুষের চেয়ে বেশি। জুন শেষে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ হয়েছে, যেখানে শহরে এই হার ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ।
গ্রামেও সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খাবারের দাম। খাদ্য খাতে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ মূল্যস্ফতি হয়েছে জুন মাসে। আর খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে মুল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
আর শহরাঞ্চলে খাদ্য উপখাতে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে।
বিবিএস এর ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং উইংয়ের পরিচালক মো. জিয়াউদ্দীন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জুন মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম বৃদ্ধি। বিবিএস এর মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ণয় করা হয় যে বাস্কেটের ভিত্তিতে, সেখানে চালের দাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রামাঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এতটা বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক খাদ্যপণ্য শহর থেকে আবার পুণঃপরিবহনের মাধ্যমে গ্রামে যায়। এখন পরিবহণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্রামে খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
দেশে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে রেখে অর্থনৈতিক অস্থিরতা সামাল দিতে ইতোমধ্যে কৃচ্ছ্রের পথে হাঁটতে শুরু করেছে সরকার। কম প্রয়োজনীয় প্রকল্পে বরাদ্দ বন্ধ রাখার পাশাপাশি বিলাস পণ্য আমদানিতে লাগাম দেওয়া হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে মানুষের কষ্ট কমাতে সরকারের আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতির গবেষক ড. জায়েদ বখত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মূলত আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণেই দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। তবে এখন বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যেরই দাম কমে আসছে।
“তাই সরকারের উচিত হবে মনিটরিং সিস্টেম বাড়িয়ে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থা মসৃণ করা। আর যেসব আমদানি পণ্যের দাম এখনো বেশি আছে, সেসব পণ্যের ক্ষেত্রে সরকার কর ছাড় দিতে পারে।