এসডিসি অর্জনে অগ্রাধিকামূলক বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাংলাদেশ যাতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে সহজেই উত্তরণ করতে পারে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) যাতে অর্জন করা যায়, সেজন্য জাপান এবং ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোকে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2022, 04:51 PM
Updated : 28 May 2022, 03:30 AM

তিনি বলেছেন, “আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ থাকব- যদি জাপান এবং অন্যান্য ওইসিডি দেশগুলো কমপক্ষে ২০২৯ সাল পর্যন্ত অগ্রাধিকার সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখে, যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের সর্বোচ্চ লক্ষ্য অর্জন আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়।”

শুক্রবার এশিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে ২৭তম আন্তর্জাতিক নিক্কেই সম্মেলনে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।

জাতিসংঘের স্বীকৃতি অনুযায়ী ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গণ্য হবে, তা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৬ সালের পরও বর্ধিত সময়ের জন্য অগ্রাধিকারমূলক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা বিবেচনা করতে বন্ধুদেশ ও অংশীদারদের প্রতি বাংলাদেশ আহ্বান জানিয়েছে।

“বেশ কয়েকটি দেশের সাথে এফটিএ নিয়ে আমাদের আলোচনা বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। জাপানসহ অন্যান্য দেশের সাথে এফটিএ এবং সিইপিএ নিয়ে আলোচনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।”

বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে মিয়ানমারে তাদের নিজ বাসভূমে ফেরত পাঠাতে সহায়তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এই সংকটের একটি গ্রহণযোগ্য মীমাংসা খুঁজে পেতে অবদান রাখতে এবং আমাদের সাহায্য করার জন্য আপনাদের সকলকে অনুরোধ করছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, এই এশিয়া মহাদেশে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশের বসবাস। এটা বিশ্বের অধিকাংশ দরিদ্র মানুষেরও আবাসস্থল।

“অতএব, আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য মিটিয়ে বিরোধপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে শান্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। শুধুমাত্র শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করেই এশিয়ার দেশগুলো জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে।”

বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র  নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ অনুসরণ করে আসছে জানিয়ে তার মেয়ে শেখ হাসিনা ভবিষ্যৎ এশিয়া গড়ার জন্য পাঁচটি প্রস্তাব রাখেন সম্মেলনে।

প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, এশিয়ার দেশগুলোকে একে অপরের প্রতি বন্ধুত্ব, বোঝাপড়া ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে এবং বিভাজন মোকাবেলায় সংহতি প্রচার করতে হবে।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রস্তাবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমানো এবং কাজ ও চুক্তির মাধ্যমে ন্যায্যতা, সম্মান, ন্যায়বিচারের মতো বিষয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেন তিনি।

আর চতুর্থ ও পঞ্চম প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়ার ভবিষ্যত নির্ভর করবে টেকসই ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার উন্নতি এবং উভয় পক্ষের জন্য সুবিধাজনক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের উপর।

এশিয়ার দেশগুলো যে উন্নয়নের ক্ষেত্রে একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, সে কথা তুলে ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে এবং সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করার ওপর জোর দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমাদের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহায্য করার জন্য ভালো অনুশীলন, জ্ঞান ও প্রযুক্তি ভাগ করে নিতে আমাদের সব শক্তি একত্রিত করতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, টেকসই বিশ্ব এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে একটি শান্তিপূর্ণ, টেকসই ও সমৃদ্ধ এশিয়া নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সব বন্ধু ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকবে।”

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে জাপানের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর অন্যতম জাপান, তারা ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এই স্বীকৃতি প্রদান করে।

“বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বড় অর্থনীতির একটিতে পরিণত হয়েছে। এই যাত্রায় জাপান, বন্ধু রাষ্ট্র এবং অংশীদারদের সমর্থন পেয়েছে বাংলাদেশ।”

বিশ্বের অন্যান্য অংশের মত বাংলাদেশও যে মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে কথা সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে মহামারীর আগে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০২০ সালে এটি দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে।  ২০২১ সালে তা ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়। চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ আশা করছে।

সাম্প্রতিক কপ-২৬সহ সব আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশ সক্রিয় ও সোচ্চার ভূমিকা নিয়েছে, সে কথাও শেখ হাসিনা বলেন।