পেঁয়াজ ও আলু সংরক্ষণে সহায়তা দেবে নেদারল্যান্ডস: কৃষিমন্ত্রী

প্রাকৃতিক পরিবেশে পেঁয়াজ ও আলুর সংরক্ষণ সময় বাড়াতে বীজ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করে সহায়তা দেবে ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডস।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2021, 01:30 PM
Updated : 24 Nov 2021, 04:01 PM

সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি দলের ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডস সফরে এই প্রতিশ্রুতি পাওয়ার কথা জানান কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “আলু, শাক সবজি, আমসহ অনেক ফসলে আমরা উদ্বৃত্ত। এসব কৃষিজ পণ্য রপ্তানির এক বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও সেই সুযোগ আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না।

“আমরা কৃষিকে লাভজনক ও বাণিজ্যিকিকরণ করতে চাই। এসব উদ্দেশ্য সামনে রেখেই নেদারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য সফর।”

পেঁয়াজ ও আলুর ক্ষেত্রে সংরক্ষণের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব পণ্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংরক্ষণ করা না গেলে এক দিকে যেমন বাজারে অস্থিরতা বাড়ে, অন্যদিকে উৎপাদিত পণ্য হাতে রাখতে পারে না বলে কৃষকও ন্যায্য দাম পায় না।  

কৃষিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের  দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণে সমস্যা রয়েছে। সংরক্ষণের অভাবে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। পেঁয়াজের উন্নত জাত, উৎপাদন ও সংরক্ষণকাল বৃদ্ধিতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে নেদারল্যান্ডস। এছাড়া আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণেও সহযোগিতা দেবে দেশটি।”

নেদারল্যান্ডস আয়তনে ছোট হলেও কৃষি উৎপাদনশীলতা, গবেষণা ও প্রক্রিয়াজাতকরণে দারুণ সাফল্য অর্জন করেছে। কৃষি পণ্য রপ্তানিতে তারা বিশ্বে দ্বিতীয়।

নেদারল্যান্ডসের কৃষি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে অ্যাক্রেডিটেশন ল্যাব উন্নয়ন ও ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেইট দেওয়ার জন্য সহযোগিতা করবে বলে জানান মন্ত্রী।

পাশাপাশি আগামী বছর দুই দেশের মধ্যে কৃষি সহযোগিতা বাড়ানোর অংশ হিসাবে বাংলাদেশে ট্রেড মিশন পাঠাবে নেদারল্যান্ডস।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে দেশে বছরে ২৪ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদার বিপরীতে ১৭ থেকে ১৮ লাখ টন উৎপাদন হয়। এর মধ্যে বছর জুড়ে উৎপাদিত পেঁয়াজের একটা নির্দিষ্ট অংশ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাকি চাহিদা মেটাতে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, স্থানীয় উৎপাদনের পর বার্ষিক চাহিদার ২০ শতাংশ পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

দেশে আলুর উৎপাদনও চাহিদার চেয়ে বেশি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এক কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদিত হলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল ৭৭ লাখ টন।

চলতি বছরও বেশি ফলনের কারণে হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর দরপতন হয়েছিল। যদিও বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় আলুর দামও ফের বেড়ে যায়।

উৎপাদনে উদ্বৃত্ত হলেও দেশ থেকে আলু রপ্তানি হয় না খুব একটা। সরকার চলতি বছরে কৃষিপণ্য রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্র ঠিক করেছে, তাতে ২০২২ সালে ৮০ হাজার টন, ২০২৩ সালে এক লাখ ২০ হাজার টন, ২০২৪ সালে এক লাখ ৮০ হাজার টন এবং ২০২৫ সালে ২ লাখ ৫০ হাজার টন আলু রপ্তানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী জানান, সফরকারী দল যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে সেদেশে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের বাজার সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে বৈঠক ও আলোচনা করে।

সম্প্রতি ১৫ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলে সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, এসিআই এগ্রোর লিংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফএইচ আনসারী, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সিএফও পারভেজ সাইফুল ইসলাম, জেমকন গ্রুপের পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, গ্লোবপ্যাক ফুডসের পরিচালক নুরুল ইসলাম ও ফ্রুট ভেজেটাবল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ছিলেন।