ডলারের বাজার চড়া কেন?

আন্তঃ ব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম কিছুটা স্থিতিশীল রাখা গেলেও খোলাবাজারে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার বিনিময় হার পৌঁছেছে সাম্প্রতিক সময়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2021, 04:16 AM
Updated : 28 Oct 2021, 04:53 AM

ব্যাংকাররা বলছেন, বিদেশগমন ও আমদানি বাড়ায় গত কিছুদিনে দেশে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু রেমিটেন্স গেছে কমে। তারই প্রভাব দেখা যাচ্ছে মুদ্রাবাজারে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক লেনদেনে (ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে কেনাবেচা) ডলারের দর ৮৫ টাকা ৬৫ পয়সায় বেঁধে রাখা হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে ৮৮ টাকার বেশি দরে।

খোলাবাজারে দর আরও বেশি; এক ডলারের জন্য গুণতে হচ্ছে ৯০ টাকার বেশি।

ডলারের বিনিময় হার বেড়ে গেলে রপ্তানিকারক আর যারা দেশে রেমিটেন্স পাঠান- তাদের লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে। কারণ একই পরিমাণ ডলার দেশে আশার পর বেশি টাকা পাওয়া যায়।

কিন্তু তাতে পণ্য আমদানির খরচ বেড়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে বাজারে, সাধারণ মানুষকেও তার জের টানতে হয়। 

ডলারের বাজার গত কিছুদিন ধরেই চড়া। গত ২৬ সেপ্টেম্বর আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দর ছিল ৮৫ টাকা ৩৫ পয়সা। এক মাসের ব্যবধানে ২৭ অক্টোবর তা ৮৫ টাকা ৬৫ পয়সা হয়েছে।

আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক বছর আগে ২৭ অক্টোবর ডলার বিক্রি হয়েছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায়। অর্থাৎ এক বছরে ব্যবধানে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক শতাংশ বেড়ে গেছে ডলারের দাম।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক বুধবার ৮৮ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। আবার বেসরকারি এবি ব্যাংক বুধবার ৮৯ টাকা ৯০ পয়সায় নগদ ডলার বিক্রি করেছে।

কার্ব মার্কেটের ডলার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুধবার তিনি ৯০ টাকা দরে ডলার কিনে বিক্রি করেছেন ৯০ টাকা ২০ পয়সা দরে।

আর গুলশানের একটি মানি এক্সচেঞ্জের মালিক জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে  ৯০ টাকা ৪০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করছেন তিনি। গত ১৫ বছরে তিনি ডলারের দাম এতটা উঠতে দেখেননি।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলছেন, দেশে ডলারের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেলেও যোগন সেভাবে বাড়েনি। তাই ডলারের দাম বেড়ে গেছে।

“বাংলাদেশে রেমিটেন্স আসা কমে গেছে। ফলে ডলার কম আসছে। অন্যদিকে আমদানি বেশ বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই হারে রপ্তানি কিন্তু বাড়েনি। ফলে ডলারের যোগান সেরকম না বাড়লেও চাহিদা বড়ে গেছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে রেমিটেন্স এসেছে ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগের তুলনায় ২০ শতাংশ কম। আর চলতি বছরের অগাস্ট মাসের তুলনায় ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম।

অগাস্ট মাসে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৬ দশমিক ৫৮৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, গতবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৪ দশমিক ১৬৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা এক বছর আগের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি।

সৈয়দ মাহবুবুর বলেন, ডলারের চাহিদা বাড়ার আরেকটি বড় কারণ বিদেশগমণ ও পর্যটন।

“করোনাভাইরাসের বিধি নিষেধ কমতে শুরু করায় মানুষ দেশের বাইরে যাওয়া শুরু করেছে। সেজন্য তাদের ডলার কিনতে হচ্ছে। সেই চাপে আরো একধাপ ডলারের দাম বেড়ে গেছে।”

ডলারের দামে অস্থিরতা নিয়ে বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।

উত্তরে তিনি বলেন, “ডলারের প্রাইস তো আমরা নির্ধারণ করিনি, এটা ফিক্সড না। এটা ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ের ওপর নির্ভর করে। ডিমান্ড যদি বেশি থাকে, আর সাপ্লাই যদি কম থাকে, তাহলে ডলারের দাম বাড়বে। এটা স্বাভাবিকভাবেই অ্যাডজাস্ট করে নেয়।”