প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রিঅ্যাক্টর স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, “পরমাণু শক্তির একটা অংশ হিসেবে সেখানে একটা স্থান আমরা করে নিতে পারলাম, আর সেটা শান্তির জন্য।
“বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, সেই বিদ্যুৎ গ্রাম পর্যায়ে মানুষের কাছে যাবে, মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হবে।”
রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল হল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এর ভেতরেই ইউরেনিয়াম থেকে শক্তি উৎপাদন হবে, যা কাজে লাগিয়ে তৈরি হবে বিদ্যুৎ। রিয়্যাক্টেরই হল একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রাণ।
গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়া থেকে এই রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল খুলনার মোংলা বন্দরে পৌঁছায়। তারপর তা নিয়ে যাওয়া হয় রূপপুরে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (আইএইএ) নীতিমালা ও মান অনুসরণ করে সেটি এখন স্থাপন করা হল।
এর প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছিল ১৪ সেপ্টেম্বর থেকেই। রোববারের অনুষ্ঠানে রূপপুর প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি চান। প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দিলে প্রকৌশলীরা নকশা অনুযায়ী সেটি যথাস্থানে বসিয়ে দেন।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে কাজটি শেষ হলে ‘জয় বাংলা, জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল।
বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে রুশ সহায়তায়। দেশটির রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ, এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লোশকিন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান রূপপুরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, “রাশিয়া বাংলাদেশের দুঃখের দিনের বন্ধু। রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের কারণে বিশ্ব সভ্যতায় অনন্য অবস্থায় উন্নীত হল বাংলাদেশ।”
রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ বলেন, “পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বেশ জটিল একটি বিষয়। রুশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার নিদর্শন ভিভিইআর রিঅ্যাক্টর, যেটি রূপপুরে নির্মাণ করা হচ্ছে।
“নির্মাণের পর এটি পরিচালনার জনশক্তিকেও প্রশিক্ষিত করে দিচ্ছে রাশিয়া। পারমাণবিক প্রযুক্তি ক্লিন এনার্জির একটি উত্তম দৃষ্টান্ত। এছাড়া রূপপুরের কারণে ২০ হাজার কর্মসংস্থান হবে। এটি শুধু স্থানীয় জীবনমানই পরিবর্তন করবে না বরং জিডিপি বৃদ্ধিতেও অবদান রাখবে। বাংলাদেশের এ প্রকল্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে রোসাটম। সময়মত এর নির্মাণ শেষ করতে রাশিয়া সম্ভাব্য সবকিছু করবে।”
প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছে, রিঅ্যাক্টর স্থাপনের পর প্রকল্পের কাজ শেষ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। প্রথম ইউনিটের ৫০ শতাংশ কাজ এ বছরেই শেষ হবে।
সরকার আশা করছে, ২০২৩ সালের এপ্রিলে রূপপুরের ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে। সব ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে।
পরের বছর জুলাই মাসে দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের জন্য কংক্রিট ঢালাই কাজ উদ্বোধন করা হয়।
রূপপুরের প্রকল্প এলাকায় এক হাজার ৬২ একর জমির ওপর চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ। প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার দেশি-বিদেশি শ্রমিক, প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞ সেখানে কাজ করছেন।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রোসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন।
দুই ইউনিট মিলিয়ে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ব্যয়ের এই প্রকল্পে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ব্যবহৃত তেজষ্ক্রিয় জ্বালানি সরিয়ে নিতেও রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।