মহামারীর প্রণোদনা পেতেও দিতে হয়েছে ঘুষ: সানেম

কোভিড-১৯ মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি প্রণোদনা পাওয়ার জন্য ২৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই ঘুষ দিতে হয়েছে বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2021, 01:18 PM
Updated : 28 August 2021, 01:18 PM

শনিবার ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এই তথ্য উপস্থাপন করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।

অনুষ্ঠানে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে কোভিড-১৯ এর প্রভাব নিয়ে ধারাবাহিক জরিপের পঞ্চম পর্বের ফলাফল উপস্থাপন করেন সানেম নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

গত বছরের এপ্রিল থেকে ধারাবাহিকভাবে ‘কোভিড- ১৯ অ্যান্ড বিজনেস কনফিডেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ত্রৈমাসিক জরিপ পরিচালনা করছে সানেম।

গত জুলাই মাসের জরিপের ফল তুলে ধরে সেলিম রায়হান বলেন, “জরিপে অংশ নেওয়া শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৯ শতাংশ উদ্যোক্তা বা প্রতিনিধি ঘুষ দাবির বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন। ৪৭ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ কোনোটাই বলেননি।

“মৌনতা সম্মতির লক্ষণ বলে এই ৪৭ শতাংশেরও বড় অংশ ঘুষের শিকার বলে ধরে নেওয়া যায়। হয়ত নানা দিক থেকে সমস্যায় পড়তে পারেন বা ক্ষতি হতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকে তারা উত্তর দেননি।”

এক প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক ঘুষের অভিযোগ তোলা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি বলে জানান।

তিনি বলেন, “জরিপে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গত জুলাই পর্যন্ত মাত্র ২১ শতাংশ শিল্প উদ্যোক্তা প্রণোদনার ঋণ সহায়তা পেয়েছেন। বাকি ৭৯ শতাংশই প্রণোদনার বাইরে রয়েছেন।”

এমন ছোট উদ্যোক্তাদেরও ঘুষ দিতে হয়েছে বলে দাবি করেছে সানেম। ফাইল ছবি

প্রতিবেদনে জরিপ চালানো ৫০১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২ শতাংশ মাঝারি এবং ৩৫ শতাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা আকারের প্রতিষ্ঠান বলে জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় কোন ব্যাংক কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুষ দাবি করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি সেলিম রায়হান।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ঘুষ দাবি করা হয়েছে কি না- জরিপে এ প্রশ্নের হ্যাঁ কিংবা না জবাবের বাইরে বিস্তারিত আর কিছু জানতে চাওয়া হয়নি।”

জরিপে দেশের ৮টি বিভাগের ৩৭ জেলার ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্প, উৎপাদনমুখী কারখানা ও সেবা খাতের ছোট, মাঝারি ও বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রশ্নোত্তর আকারে তথ্য নেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারীর কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা বিনিয়োগে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের দিক থেকে এদেশ দুর্বল অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করছে ৬৪ শতাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান।

মহামারীকালে এসব কারখানার উৎপাদন, ব্যবসার খরচ, কর্মসংস্থান, বিক্রিসহ মোট ছয়টি উপাদানকে আমলে নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সানেম।

চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত, এক বছরে ব্যবসা সূচকে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও, এখন গড়ে ৪২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প।

সেলিম রায়হান বলেন, “জরিপ চলার সময় থেমে থেমে অথবা টানা লকডাউন চলছিল। জীবন-জীবিকার তাগিদে সরকার লকডাউন তুলে নিলেও খুব একটা ইতিবাচক অবস্থা দেখছেন না ব্যবসায়ীরা।”

জরিপে দেখা যায়, এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৬০ শতাংশ কর্মচারী অন্তত একবার করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন।

কেবল প্রশাসন দিয়ে নয় বরং সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান মিলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এ যাত্রায় কাজ করার আহ্বান জানান সানেম নির্বাহী পরিচালক।

দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ।