ডেটা সেন্টারের জন্য ওরাকলের ক্লাউড সেবা কিনছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ‘ফোর টিয়ার’ জাতীয় ডেটা সেন্টারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি ওরাকলের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্লাউড সেবা কেনার প্রস্তাব সরকারের নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2021, 02:29 PM
Updated : 29 July 2021, 04:22 PM

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রস্তাবটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়।

ডেটা সেন্টারের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বেছে নেওয়ার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অর্থ সাশ্রয়, তথ্যের নিরাপত্তা ও জরুরি সময়ের মধ্যে ডেটা সেন্টারের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ওরাকল থেকে এ সেবা কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

“আমাদের ক্লাউড সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি করাটা ‘ইমিডিয়েটলি’ দরকার। ই-নথি, সুরক্ষা প্লাটফর্ম, ভার্চুয়াল কোর্ট, এনবিআর, ইলেকশন কমিশন থেকে শুরু করে বেশ কিছু বড় বড় সিস্টেম আমাদেরকে এখন হোস্ট করতে হচ্ছে। ক্লাউড ক্যাপাসিটি দ্রুত বৃদ্ধি না করলে এই কার্যক্রমগুলো বাধাগ্রস্ত হবে।“

২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত টিয়ার থ্রি মানের জাতীয় ডেটা সেন্টারটি এখন ২৪ ঘণ্টা তিন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে- অবকাঠামো, প্লাটফর্ম ও সফ্টওয়ার।

ওরাকলকে বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, ভূমিসহ সরকারের ১৪৫টি এজেন্সি যারা ডেটাবেইজগুলো ম্যানেজ করে তারা ওরাকলের এসকিউএল ডেটাবেজ সিস্টেম ব্যববহার করে। প্রতিবছর সার্ভিস চার্জ, লাইসেন্স ফি বাবদ প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার তাদেরকে দিতে হয়।

“কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে এই ডেটা সেন্টার হচ্ছে। ফলে আমাদের দেশের ভূখণ্ডের মধ্যেই তথ্যগুলো থাকবে। তাতে ওই ৪৫ মিলিয়ন ডলার অর্থ সাশ্রয় হবে।”

আগামী চার বছরের মধ্যে জাতীয় ডেটা সেন্টার ‘ব্রেক ইভেনে’ (আয়-ব্যয় সমান) চলে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ণাঢ্য ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের বছরব্যাপী গৃহীত কর্মসূচির মাধ্যমে সমাপনী ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম নিয়োগ, নগরসজ্জা এবং দেশে-বিদেশে ওয়ার্কশপ/সেমিনার/কনফারেন্স, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী আয়োজনসহ বিভিন্ন প্রকাশনা, ভিডিও, ডকুমেন্টারি, এলইডি স্কিন স্থাপন এবং আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সেবা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদনও সভায় দেওয়া হয়েছে।

সভার পরে অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরব্যাপী উদযাপনের শেষ হলেও এর সমাপনী অনুষ্ঠান হয়নি। বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে তুলে ধরার জন্য সমাপনী অনুষ্ঠানে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হবে।

কালিয়াকৈর হাই টেক পার্কে বাংলাদেশের জাতীয় ডেটা সেন্টার

এছাড়া চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ডান তীরে লালদিয়া চর এলাকায় ৫৯ দশমিক ৮৭ একর জমির উপর বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণের একটি প্রকল্প পিপিপির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে এদিন।

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আরও ৭টি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

১৫৫ কোটি ৪৩ লাখ ৩৫ হাজার ১৯৫ টাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম নির্মাণের কাজ পেয়েছে বিআইসি ও এসএসআরআইয়ের জয়েন ভেঞ্চার।

৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার ১৬৮ টাকায় পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্পের পূর্তকাজ পেয়েছে স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক ২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ৫২টি লটে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৬টি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ১১৫ কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩৯ টাকার কাজ পেয়েছে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস (৪৬টি লট) ও কচুয়া প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স (৬টি লট)।

২০২১-২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি কোম্পানি সৌদি বেসিক ইন্ড্রাস্টিজের কাছ থেকে ১ম লটে ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১২৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৫ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জামালপুরে যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের একটি গ্যাস ওয়েস্ট হিট বয়লার ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ৫৬ কোটি ৬৫ লাখ ৪১ হাজার ১৩৫ টাকায় কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ২৬৬ কোটি ১৭ লক্ষ ১৭ হাজার ৬২৮ টাকার প্রকল্পটি দেওয়া হয়েছে জামাল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডকে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সামসুল আরেফিন বলেন, নভেম্বর ২০১৮-২০২১ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল। এখন প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল জুলাই ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।