হাল্কা প্রকৌশল শিল্পে সহযোগিতা করতে চায় সরকার: মান্নান

হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের রপ্তানিতে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে এ খাতে কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, তা জানতে উদ্যোক্তা ও গবেষকদের সহযোগিতা চেয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম মান্নান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2021, 01:47 PM
Updated : 26 June 2021, 01:47 PM

শনিবার ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ প্রেক্ষিত: বেসরকারি খাত’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইস দ্য টক অব দ্য টাউন নাউ। সরকার এই খাতে রপ্তানির দিকে মনোযোগ দিতে চায়। এখনও নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে এবং এটাকে আরও সহযোগিতা করতে চায়।”

উদ্যোক্তাদের কী ধরনের সহযোগিতা দরকার এমন তথ্যের অভাববোধ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আরও কিভাবে সহযোগিতা করলে উদ্যোক্তারা এর সুফল পাবেন। এ ধরণের আইডিয়া আপনারা সরকারের কাছে নিয়ে আসবেন।”

প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “আমার ধারণা সরকার ওপেন টু আইডিয়াস গ্যাপ…. আপনারা আইডিয়া নিয়ে আসবেন।”

সংলাপে রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান জানান, হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের বিস্তার চাইলে এর সঙ্গে জড়িত ‘পশ্চাদসংযোগ শিল্প’ স্থানীয়ভাবে গড়ে তোলার নীতি নির্ধারণ করতে হবে।

তিনি বলেন, “বিশ্ববাজারে হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি চাহিদা রয়েছে। সম্প্রতি চীন থেকে অন্য দেশে শিল্প স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের নামও আছে।

“কিন্তু হাল্কা প্রকৌশল শিল্প গড়ে উঠতে যে ধরণের নীতি প্রয়োজন তা এ দেশে নেই। এই শিল্প গড়ে তুলতে এর পশ্চাদসংযোগ শিল্পের প্রয়োজন। এজন্য যে ধরনের দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে তার উদ্যোগ যথেষ্ট নয়।”

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, “রপ্তানি বাজারে সুবিধা পেতে প্রয়োজন রপ্তানির চাহিদা ভিত্তিক বাজারগুলোর সঙ্গে এফটিএ (মুক্তবানিজ্য) ও পিটিএ (প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট) করা।

“ভিয়েতনাম ইতোমধ্যে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার অনেক বাজারের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছে। এক্ষেত্রে আমরা এখনো পিছিয়ে রয়েছি।”

কর কাঠামোতেও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে জানিয়ে তিনি বলেন, “শিল্প পণ্য রপ্তানিতে ভিয়েতনাম যেখানে মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ রপ্তানিকর নেয়, সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানিকর ১০ শতাংশের বেশি।”

শিল্প স্থাপনে লজিস্টিক ব্যয় কমানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “সবচেয়ে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ওপর। দীর্ঘ মেয়াদী কর সুবিধা ও লজিস্টিক সুবিধা না পেলে বিদেশি বিনিয়োগ নার্ভাস থাকে।”

এসময় তিনি শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়ার দুর্ভোগের কথা উল্লেক করে বলেন, “ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে সকল প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হবে।”

অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, “অলস রিজার্ভ বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই, এটা লাভজনক কোনো খাতে ব্যবহার করা যায় কিনা তা চিন্তা করে বের করা দরকার।”

কৃষি খাতের উদ্যোক্তা সাবেক সেনাপ্রধান হারুন আর রশিদ বলেন, “সরকার কৃষি খাতের ওপর সুবিধা দেওয়ার কথা বারবার বলে আসলেও বাস্তবে এই শিল্পে টার্নওভার ট্যাক্স নিচ্ছে।

“একজন কৃষি উদ্যোক্তা লাভ করতে না পারলেও তার কাছে থেকে এই ট্যাক্স নেওয়া হলে উদ্যোক্তা চাপের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।”

তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় সরকারের প্রয়োজনীয় সেবাগুলো পেতে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের ছাড়পত্র পেতে। আবার প্রতিবছর লাইসেন্স নবায়নের জন্যও বছরের অনেক সময় পার হয়ে যায়।

এর আগে সংলাপের মূল প্রবন্ধে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, “চলমান মহামারীর মধ্যেও আমাদের রপ্তানি, রিজার্ভ এবং রেমিট্যান্স ভাল অবস্থায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এবারের বাজেটে আমরা অতীতের কাঠামো ভাঙার আশা করেছিলাম, কিন্তু তা হয় নি।”

চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেট যে পরিমাণ বড় হতে পারতো তা করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “বরং জিডিপি‘র হিসাবে এবারের বাজেট অন্যান্য বছরের তুলনায় উল্টো কমে গেছে।”

তিনি বলেন, এর ফলে স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে পারেননি অর্থমন্ত্রী। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, নতুন বাজেটে নতুন করে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে কিন্তু তা কিভাবে বন্টন করা হবে সে বিষয়ে বলা হয় নি।

এসময় তিনি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ করা অর্থ খরচ করতে না পারার ব্যর্থতার সমালোচনা করে বলেন, “এবারও অনেক প্রকল্প শেষ করতে পারছে না সরকার। জুনের মধ্যে ৪৪৪টি প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৩৫৫টি শেষ করতে পারে।”

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) এবং বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে।

আইবিএফবি চেয়ারম্যান হুমায়ুন রশিদের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল এই সংলাপে টিএমএসএস এর নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরাসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।