মানব উন্নয়নে অগ্রগতি ধরে রাখায় জোর

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এবার দুই ধাপ এগোলেও ‘আত্মতুষ্টিতে’ না ভুগে উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2020, 08:46 AM
Updated : 21 Dec 2020, 08:46 AM

তিনি বলেন, “মোটা দাগে আমরা ভালো করেছি, এটা নিয়ে কারও মনে কোনো সন্দেহ সংশয় নেই। তবে কিছু জায়গায় সেভাবে ভালো করতে পারি নাই, এটা দোষের কিছু না, সেক্ষেত্রে আমাদের উন্নতি করতে হবে।”

গতবছরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ইউএনডিপি গত ১৫ ডিসেম্বর যে ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০২০’ প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে, এবার ১৮৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১৩৩তম স্থানে। ২০১৮ সালে প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ১৩৫ তম অবস্থানে ছিল।

তার আগে ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল যথাক্রম ১৪২, ১৩৯ এবং ১৩৬তম স্থানে। অর্থাৎ ধীর গতিতে হলেও ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

সোমবার এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রতিবেদনটির বাংলাদেশ অংশের মোড়ক উম্মোচন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ইউএনডিপির জ্যেষ্ঠ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বালাজ হোবার্থ এবারের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

সূচকে অগ্রগতির সঙ্গে বৈষম্য দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ বহুমুখী দারিদ্র্যের শিকার (মাল্টিডাইমেনশনাল পুওর)। ১৮ দশমিক ২ শতাংশ বহুমুখী দারিদ্রের দিকে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

”এতে নীতিনির্ধারকদের মনযোগ দেওয়া দরকার। তবে, দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে এটাও গত কয়েক দশক থেকে অনেক অগ্রগতি।”

বালাজ হোবার্থ বলেন, অগ্রগতি হলেও ২০১৯ সালের বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন সূচকের মান ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে।

”অন্যদিকে নারীদের ক্ষেত্র সে মান পুরুষদের তুলনায় ১০ শতাংশ কম। নেপালে যেটা ৭ শতাংশ আর পাকিস্তানে অনেক বেশি, ২৫ শতাংশ।”

প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয় ও সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও আর্থিক প্রবাহ, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য ও জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে এই মানব উন্নয়ন সূচক তৈরি করে ইউএনডিপি।

এসব মাণদণ্ডে এবার বাংলাদেশের এইচডিআই স্কোর দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬৩২, যা গতবার শূন্য দশমিক ৬১৪ ছিল।

গতবারের মত এবারও সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে। ইউরোপের এ দেশটির এইচডিআই স্কোর শূন্য দশমিক ৯৫৪ থেকে বেড়ে শূন্য দশমিক ৯৫৭ হয়েছে।

এই সূচকে আসা ১৮৯টি দেশকে অতি উন্নত, উন্নত, মধ্যম ও নিম্ন মানব উন্নয়নের চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রয়েছে মানব উন্নয়নের মধ্যম দেশের স্তরে।

মানব উন্নয়নে প্রতিবেশী ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান (১৫৪), মিয়ানমার (১৪৭) ও নেপালের (১৪২) চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও শ্রীলঙ্কা (৭২), মালদ্বীপ (৯৫), ভারত (১৩১) ও ভুটানের (১২৯) চেয়ে পিছিয়ে আছে।

এবারের সূচকের শীর্ষ দশ দেশ হচ্ছে- নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, হংকং, আইসল্যান্ড, জার্মানি, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ক। এর মধ্যে কেবল হংকংই এশিয়ার।

আর সবচেয়ে বাজে অবস্থানে থাকা ১০ দেশ হল নাইজার, সেন্ট্রাল আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, চাদ, দক্ষিণ সুদান, বুরুন্ডি, মালি, সিয়েরা লিয়ন, বুরকিনা ফাসো, মোজাম্বিক, ইরিত্রিয়া এবং ইয়েমেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, “সার্বিকভাবে আমরা উন্নতি করেছি, তবে এটা যথেষ্ট নয়। আমাদেরকে আত্মতুষ্ট না হয়ে বহির্মুখী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।”

কিছুক্ষেত্রে নীতি সহায়তা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেই সহায়তা অবশ্যই সরকার দেবে।

”গত ১০-১২ বছর ধরে আমরা জিডিপিতে ধারাবাহিক অগ্রগতি সাধন করছি। তার মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যে পন্থায় যাচ্ছি, তাতে পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। এখন প্রয়োজন প্রান্তিক অঞ্চল ও গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।”

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “দারিদ্র্য দূরীকরণ, আবার একইসময়ে অসাম্য, অগ্রহণযোগ্য অসাম্য— যেগুলোকে মানুষের তৈরি অসাম্য আমি বলব, সেই অন্যায় বৈষম্য অনেকক্ষেত্রে জেঁকে বসে আছে এখনো। এই অন্যায়গুলোকে আমাদের দূর করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জি।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের সঞ্চালনায় আলোচনা পর্বে অংশ নেন পরিকল্পনা কমিশনের জে্যষ্ঠ সচিব অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক সলীমুল হক, সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন সামিয়া হক, স্থপতি ইকবাল হাবিব।