অর্থ পাচার ঠেকাতে ‘বিশেষ সুবিধার’ পক্ষে এনবিআর চেয়ারম্যান

দেশে ‘কর দেওয়ার ভয়ে’ যারা বিদেশে অর্থ পাচার করছেন, বিশেষ কর সুবিধা দিয়ে হলেও তাদের টাকা পাচার বন্ধ করা উচিত বলে মনে করছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2020, 01:45 PM
Updated : 30 Nov 2020, 02:05 PM

কীভাবে পাচার রোধ করা যায় তা নিয়ে এনবিআর চিন্তাভাবনা করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

জাতীয় আয়কর দিবস উপলক্ষে সোমবার এক সেমিনারে এবিআর চেয়ারম্যানের এ বক্তব্য আসে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে এই সেমিনারে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত, সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস এর জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ এবং প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস বাংলাদেশের ম্যানেজিং পার্টনার মামুন রশিদ।

অধ্যাপক প্রাণ গোপাল বলেন, “যেসব নাগরিক দেশকে কর দেওয়ার ভয়ে বিদেশে টাকা পাচার করে দিচ্ছেন… ট্যাক্স হেভেন দিয়ে হলেও সেই টাকা দেশে রাখা যায় কিনা, সেই চিন্তা এনবিআরের করা উচিত।”

তার ওই বক্তব্যের সূত্র ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্তের প্রস্তাবের সঙ্গে আমিও একমত। যারা দেশে কর দেওয়ার ভয়ে বিদেশে টাকা পাচার করে দিচ্ছেন, তাদের জন্য বিশেষ কর সুবিধা দেওয়া যায় কিনা, আমাদের চিন্তা ভাবনা করতে হবে।

“তাদেরকে কীভাবে সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায়, সেটা আমাদের বের করতে হবে।”

বাংলাদেশ থেকে কত টাকা প্রতি বছর পাচার হয়, তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব সরকারের কাছে নেই।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইনানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০১৫ সালে বাণিজ্যের নামে কারসাজির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানান, বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের সত্যতা সরকার পেয়েছে। প্রাথমিকভাবে অর্থপাচারে জড়িত যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে সরকারি কর্মচারীই বেশি।

এই প্রেক্ষাপটে অর্থপাচারকারীদের নাম-ঠিকানার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার যে লক্ষ্য ঠিক করেছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে রাজস্ব আহরণ ‘অনেক’ বাড়াতে হবে।

আর সেজন্য ‘করদাতা বান্ধব পরিবেশ’ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, “উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে করনেট সম্প্রসারণের পাশাপাশি কর আইন আরও সহজ করা উচিত।”

টাকা পাচার বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি করের ক্ষেত্রে দেশের সত্তরোর্ধ্ব নাগরিকদের জন্য কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়া যায় কীনা- তা এনবিআরকে খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত।

নাজনীন আহমেদ বলেন, “আমরা মাত্র দশ বছরে মাথা পিছু আয় ৭০০ ডলার থেকে প্রায় তিনগুণ বাড়িয়ে ২ হাজার ৬৪ ডলারে উন্নীত করেছি, যে সাফল্যে আমাদের প্রতিবেশীরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।”

এই সাফল্য ধরে রেখে দেশকে আরও উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর ওপর জোর দেন বিআইডিএস এর এই গবেষক।

তিনি বলেন, “রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর জন্য কর প্রশাসনকে করবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কোনো করদাতা যদি কোথাও হয়রানির শিকার হন, তাহলে তার অভিযোগ জানানো ও শোনার ব্যবস্থা থাকতে হবে।”

মানুষকে কর দিতে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক প্রচার চালানোর পাশাপাশি লোকবল বাড়িয়ে রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন নাজনীন আহমেদ।

মামুন রশিদ বলেন, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হলে অবশ্যই কর দাতাদের সঙ্গে কর প্রশাসনের দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

সেইসঙ্গে করজাল সম্প্রসারণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের  পরামর্শ দেন তিনি।