জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.২৪%

মহামারীর মধ্যেও গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। স্থিরমূল্যে এই জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2020, 05:56 PM
Updated : 11 August 2020, 07:48 AM

আর মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে ২০৬৪ ডলারে উঠেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সোমবার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

করোনাভাইরাস মহামারীকালের এই কঠিন সময়ে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ‘খুবই আনন্দের এবং আশাব্যঞ্জক’ বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

সোমবার রাতে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত অর্থবছরের এক তৃতীয়াংশ সময় আমরা কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ছিলাম। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে চলতে হয়েছে আমাদের। মার্চ থেকে জুন এই চার মাস প্রায় সব কিছুই বন্ধ ছিল। তারপরও ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খুবই ভালো বলে আমি মনে করি।”

তিনি বলেন, “আমি এজন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। এই দেশের মানুষ আবারও প্রমাণ করল, যত ঝড়-ঝাপটাই আসুক না কেন, তারা তাদের আন্তর্নিহিত শক্তি দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখবেই।”

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ বলেছিল, আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। কিন্তু সেটা ভুল প্রমাণ করে একটা সম্মানজনক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

“আমার ধারণা, পৃথিবীর অনেক বড় বড় দেশ এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না।”

বিবিএসের জাতীয় আয় শাখার পরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাথমিক হিসাবের তথ্য। আগামী দেড়-দুই মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করা হবে।”

মহামারীর ধাক্কা সামলে আবার রপ্তানিতে ফিরছে পোশাক শিল্প (ফাইল ছবি)

২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।

মহামারীর সময়ে উচ্চাভিলাষী এই প্রবৃদ্ধি ধরার জন্য বাজেট ঘোষণার পর পরই অর্থনীতিবিদরা সরকারের সমালোচনা করেছিলেন।

মহামারীর ধাক্কায় বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হওয়ার কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অনেক কম হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ।

দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগও (সিপিডি) বলেছিল, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি হবে না।

সরকারও লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশ পুনঃনির্ধারণ করেছিল।

গত ৮ জুন প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস ২০২০ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আরও কমে ১ শতাংশে আসতে পারে।

গত ৩ জুন প্রকাশিত আইএমএফের কান্ট্রি রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব হবে মারাত্মক। আর এর প্রভাবে প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে আভাস দিয়েছিল।

মহামারীকালে রেমিটেন্সের গতি কমতে দেননি প্রবাসী কর্মীরা, বরং বাড়িয়ে চলেছেন (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হওয়াটা ‘অস্বাভাবিক কিছু নয়’।

“কেননা করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও কৃষিতে উৎপাদন ভালো হয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স খুবই ভালো ছিল। মহামারীর মধ্যে রেকর্ডের পর রেকর্ড হয়েছে।”

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাবে স্থিরমূল্যে ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা জিডিপির মধ্যে মধ্যে সেবা খাত থেকে এসেছে ৫৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ১৪ লাখ ৯১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। শিল্প খাত থেকে এসেছে ৩১ দশমিক ১৩ শতাংশ বা ৮ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। আর কৃষি খাত থেকে এসেছে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা বা ১৩ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ১৯০৯ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ১৭৫১ ডলার। তার আগের ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ১৬১০ ডলার।