তামাক কোম্পানিতে সরকারি শেয়ার না রাখার পক্ষে সাবের

স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানির শেয়ার সরকারের ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মত জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2020, 03:54 PM
Updated : 2 June 2020, 07:00 PM

তিনি বলেছেন, “যে শিল্পের কারণে বাংলাদেশে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ মারা যায়, ৪ লাখ মানুষ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, সে ধরনের শিল্পের মধ্যে সরকারের কিভাবে শেয়ার থাকে? সুতরাং সরকারের সে শেয়ার ছেড়ে দিতে হবে।”

প্রগতির জন্য জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও এ্যান্টি টোবাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মার আয়োজনে মঙ্গলবার ‘কেমন তামাক কর চাই-বাজেট ২০২০-২১’ শিরোনামে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় একথা বলেন সাবের।

দেশে তামাকপণ্য বিপণনকারী সবচেয়ে বড় কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো (বিএটিবি) কোম্পানিতে সরকারের ৭ শতাংশের মতো শেয়ার রয়েছে।

সাবেরের যুক্তি, তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার থাকলে তামাক বন্ধের কাজটি গতি পাবে না।

বিএটিবির পরিচালনা পর্ষদে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের থাকার উদাহরণ দেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সম্প্রতি তামাক নিষিদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আহ্বান উপেক্ষা করে শিল্প মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যেও তামাক পণ্য উৎপাদন অব্যাহত ছিল শিল্প মন্ত্রণালয়কে খুঁটি করে।

সাবের বলেন, “বিএটিবির বোর্ড অব ডিরেক্টরসে সরকারি আমলাদের বসানো হয়, যাতে সরকারকে প্রভাবিত করতে পারে। আমাদের শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব কে? তিনি বিএটিবির একজন পরিচালক। মাননীয় শিল্পমন্ত্রী, তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি, তিনি একটা বক্তব্য দিলেন, হুট করে বন্ধ করে দেওয়া যায় না।

“আমরা হুট করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর যে আয়োজন, যে সূচি পরিবর্তন করলাম, হুট করে অর্থনীতিকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম, বিচার ব্যবস্থা আদালত বন্ধ করে দিলাম, শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলাম… এখন তামাককে চালু রাখতে হবে?”

সরকারের উপর তামাক কোম্পানির প্রভাব বন্ধে শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মত জানিয়ে সাবের বলেন, “অন্যথায় সরিষার মধ্যে ভূত থেকেই যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “তারা ১৯৫৬ সালের অ্যাসেনশিয়াল গুড অ্যাক্ট আইনের ফাঁক গলে সেখানে তামাককে দরকারি পণ্য বলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাই এই মহামারীর সময়েও এই আইন ব্যবহার করে তামাককে দরকারি পণ্য বলছে।

“(সংসদের) এই অধিবেশনে না হোক, আগামী অধিবেশনে আমি এই আইনের সংশোধনীর বিষয়ে প্রস্তাব আনব।”

প্রজ্ঞার এই আলোচনায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের ছাড়াও যোগ দেন জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত, সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ, বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবীর। আলোচনা সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক নাদিরা কিরণ।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শুরুতে প্রজ্ঞার সমন্বয়ক হাসান শাহরিয়ার। তিনি তামাকপণ্য গ্রহণে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির দিকটি তুলে ধরেন।

তামাক কর প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, সিগারেটের মূল্য স্তর ৪টি থেকে কমিয়ে ২টিতে নামিয়ে আনতে হবে। নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একীভূত করে নিম্নস্তর; উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরকে প্রিমিয়াম স্তর করতে হবে।

হাসান শাহরিয়ার বলেন, “খুব দ্রুত তামাক পণ্যে সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে। তামাক পণ্যের খুচরা মূল্যের ৩ শতাংশ সারচার্জ আরোপসহ সকল তামাকপণ্যের কর ও দাম বাড়িয়ে তরুণদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।

“২০২০-২১ অর্থ বছরে এই প্রস্তাবিত অর্থ কর বাস্তবায়ন করা গেলে প্রায় ২ মিলিয়ন প্রাপ্ত বয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহী হবে। দীর্ঘমেয়াদে তা শূন্য দশমিক ৬ মিলিয়ন ধূমপায়ীরা অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।”

এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করা গেলে সিগারেটের ব্যবসার ১৪ শতাংশ ও বিড়ির ব্যবহার ৫ শতাংশ কমে আসবে বলেও হিসাব দেন তিনি।

অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা জানাতে গিয়ে হাসান শাহরিয়ার বলেন,এই প্রস্তাবিত বাজেট সংশোধনী বাস্তবায়ন করা গেলে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে।

এছাড়া ৩ শতাংশ সার চার্জ থেকে বাড়তি প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে।

কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, “করোনার এই পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা কল্যাণের জন্য কাজে লাগাতে হব। আমাদের তামাক ব্যবহার বন্ধ করে সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিতে হবে।”

তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব

>> সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে (নিম্ন এবং প্রিমিয়াম) নামিয়ে আনা। ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট অর্থের সম্পূরক শুল্ক আরোপ।

>> বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দেওয়া। ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট অর্থের সম্পূরক শুল্ক আরোপ।

>> ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের (জর্দা ও গুল) মূল্য বৃদ্ধি করা: শতকরা ৪৫ভাগ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং সুনির্দিষ্ট অর্থ সম্পূরক শুল্ক আরোপ। ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বলবৎ রাখা।

>> এছাড়া সকল তামাকপণ্যের খুচরামূল্যের উপর ৩ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করা।