সাতক্ষীরায় লবণ পানি ঠেকাতে ৪৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প

সাতক্ষীরায় পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের মাধ্যমে জোয়ারের চাপ ও ঝড়ো বাতাসের কারণে লবণাক্ত পানির প্রবেশ বন্ধে একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2020, 11:22 AM
Updated : 2 June 2020, 11:53 AM

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী  গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত কর্মকর্তাদের  সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই সভা করেন।

সভায় ৪৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার ১,২, ৬-৮ এবং ৬-৮ (এক্সটেনশন) এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক  প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরার বেড়িবাঁধ ভেঙে সমুদ্রের লবণাক্ত জোয়ারের পানি কৃষি এলাকায় ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানিয়েছেন।

একনেক বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সাতক্ষীরার পোল্ডার, নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পোল্ডারের ভেতরের নদী খালগুলো পুনঃখনন এবং পুনরাকৃতির মাধ্যমে এলাকায় লবণাক্ত পানি ঢুকতে না দিতেই এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।”

একইসঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ সুবিধা দিয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য বলে জানান মন্ত্রী।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমানে ওই এলাকায় চিংড়ি চাষের জন্য সমুদ্রের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করানো হয়। এই কাজে কয়েকটি জায়গা থেকে পানি নেওয়ার ফলে সুষ্ঠূ ব্যবস্থাপনা ছিল না, যার ফলে বাঁধ নষ্ট হয়ে গেছে।

“প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন থেকে নির্ধারিত একটি জায়গা থেকে লবণাক্ত পানি নিতে হবে। ওই জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পানি নিতে গেলে যে খরচ হয় সেটা যেন ব্যবসায়ীরা দেন।”

মন্ত্রী জানান, অনেক দিন ধরে ওই এলাকার নদী খনন না হওয়ায় বাঁধগুলো নিচু হয়ে যায়। এমন অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড শিগগির প্রকল্পটি শুরু করে ২০২৩ সালের জুনে শেষ করবে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে চুনা নদীর বাঁধ ভেঙে শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী এলাকায় তলিয়ে গেছে চিংড়ি ও কাঁকড়ার খামার ছাড়াও বহু ঘর। ছবি: তমজিদ মল্লিক

এ প্রকল্পের আওতায় ওই এলাকার ৬০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার নদী পুনঃখনন করা হবে। নদী ড্রেজিং করা হবে ২০ দশমিক ৫০ কিলোমটার। খাল পুনঃখনন করা হবে ৩৪৪ কিলোমিটার। বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করা হবে ১১৩ কিলোমিটার এবং ২৭টি নিষ্কাশন রেগুলেটর মেরামত ও পুনর্গঠন করা হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বৈঠকে ১৬ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ের ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৪ হাজার ৪০১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, প্রকল্প সহায়তার খাত থেকে প্রায় এক হাজার ৮৮২ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা যোগান দেওয়া হবে।

বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পুগলো হল:

>> ‘কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যান্ডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

>> ‘কোভিড-১০ রেসপন্স ইমারজেন্সি অ্যাসিসট্যান্স’ প্রকল্প। এর ব্যয় ১ হাজার ৩৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

>> ‘প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রকল্প-৩য় পর্যায়’ প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৮৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

>> ‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম-৭ম পর্যায়’ প্রকল্প। এর ব্যয় ৩ হাজার ১২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

>> ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) (১ম সংশোধিত প্রকল্প)’ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা।

>> ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প।এতে ব্যয় হবে প্রায় এক হাজার ২৩৮ কোটি টাকা।

>> ‘কৃষি যন্ত্রপাতি ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাকে অধিকতর লাভজনক করা’ প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয়ছে ৫৬ কোটি টাকা।

>> ‘মানসম্পন্ন মসলা বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় ৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

>> ‘দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার (১ম সংশোধিত প্রকল্প)’ প্রকল্প।এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৯৫ কোটি টাকা।