বিকাশে রেমিটেন্সে উল্লম্ফন

পৃথিবীব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যে বিকাশে বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2020, 05:44 PM
Updated : 4 May 2020, 05:44 PM

গত এপ্রিল মাসে ১০৬ কোটি টাকার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বিকাশের মাধ্যমে দেশে রেমিটেন্স আসা শুরু হওয়ার পর এক মাসে এতো বেশি রেমিটেন্স আসেনি।

মার্চ মাসের চেয়ে এপ্রিলে চার গুণ বেশি রেমিটেন্স এসেছে। মার্চে বিকাশের মাধ্যমে ২৭ কোটি টাকা পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এপ্রিল মাসে বিকাশের মাধ্যমে রেমিটেন্স লেনদেন হয়েছে ৯২ হাজারেরও বেশি। মার্চে লেনদেনের সংখ্যা ছিল ৩৬ হাজার।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেল হয়ে বৈধভাবে দেশে বিকাশের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানোর সেবা চালু হয়।

এপ্রিলে বিকাশের মাধ্যমে রেমিটেন্সের উল্লম্ফন প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশেষ প্রয়োজনের এই সময়টিতে প্রবাসী এবং দেশে অবস্থানকারী প্রিয়জন উভয়ই ঘরে অবস্থান করায়, অর্থ প্রেরণকারী বাইরে না গিয়ে তার নিজের মোবাইল থেকে অনলাইন অথবা ওয়ালেট ভিত্তিক মানি ট্রান্সফার সেবা থেকে নির্ধারিত ব্যাংকিং চ্যানেল হয়ে দেশে তার স্বজনের বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাচ্ছেন।

“ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এই সময়ে বিকাশ অ্যাকাউন্টে রেমিটেন্স আসার পরিমান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।”

বিকাশের কর্মকর্তারা বলেন, কঠিন এই সময়ে প্রবাসীদের স্বজনরা ব্যাংকে না গিয়ে ঘরে বসে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে রেমিটেন্সের অর্থ প্রয়োজন মতো ক্যাশ আউট করতে পারছেন; সেন্ড মানি করছেন।

এছাড়া পেমেন্ট দেওয়া, বিভিন্ন বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ করাসহ আরও অনেক প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারছেন এবং নিরাপদে থাকতে পারছেন বলে জানান কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ ৬টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রেমিটেন্স গ্রহণের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

বিকাশে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্য থেকে। ভ্যালইউ, হানপাস, জিমানি এর মত ওয়ালেট ভিত্তিক সেবা প্রতিষ্ঠানের সাথে বিকাশের কৌশলগত অংশীদ্বারিত্বের ফলে, কোভিড-১৯ এর এই সময়েও এ সব দেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা তাদের মোবাইল ওয়ালেট থেকে কয়েক মুহুর্তেই দেশে স্বজনদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারছেন।

এই কঠিন সময়েও ওর্য়াল্ড রেমিট, ট্রান্সফারওয়াইজ, রিয়া, গালফ এক্সচেঞ্জ, বাহরাইন ফিন্যান্স কোম্পানি-বিএফসি, ব্র্যাক সাজন, সিবিএল মানি ট্রান্সফার, অগ্রণী এক্সচেঞ্জ, এনবিএল এক্সচেঞ্জসহ বিশ্বের শীর্ষ ৩৪টি মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানের সাথে বিকাশের অংশীদ্বারিত্বের সুবাদে ৮০টির বেশী দেশ থেকে সহজেই বাংলাদেশে প্রিয়জনের কাছে অর্থ পাঠাতে পারছেন প্রবাসীরা।

কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ধস নেমেছে। এপ্রিল মাসে ১০৮ কোটি ১০ লাখ (১.০৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

এই অংক আগের মাসগুলোর তুলনায় বেশ কম; এক মাসের হিসাবে আড়াই বছর পর সবচেয়ে কম রেমিটেন্স এসেছে এপ্রিলে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। তার পর থেকে গত আড়াই বছরে প্রতি মাসেই রেমিটেন্স এসেছে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কোনো মাসে সেটা দেড় বিলিয়ন ডলারও ছাড়িয়েছে।

এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল ২০১৮ সালের মে মাসে; প্রায় ১৭৫ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাজী ছাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব এখন অবরুদ্ধ। প্রায় সব দেশেই চলছে লকডাউন। কোথাও কোনো কাজ নেই।

“এর মধ্যেও প্রবাসীরা দেশে তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠাচ্ছেন। আমরা ভেবেছিলাম এই সঙ্কটের সময়ে দেশে রেমিটেন্সের পরিমাণ একেবারে তলানিতে নেমে আসবে। তবে তা হয়নি।

ছাইদুর রহমানের ভাষায়, এই পরিস্থিতির মধ্যেও প্রবাসীরা যে টাকা পাঠাচ্ছেন, তাকে ‘খুব খারাপ অংক’ বলা যাবে না।

“আমরা ভেবেছিলাম এপ্রিল মাসে ১ বিলিয়ন ডলারের কম, ৯৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স আসবে। কিন্তু মাস শেষে রেমিটেন্স ১০৮ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।”