আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংকের বার্ষিক সভা সামনে রেখে মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে নাইরোবিভিত্তিক সংস্থাটি।
করোনাভাইরাস সঙ্কটে বিশ্বজুড়ে দরিদ্র পরিবারগুলোর আয় কমার পাশাপাশি ভোগ ব্যয় কতটা সঙ্কুচিত হচ্ছে, তা হিসাব করে দারিদ্র্যের মানচিত্রে সম্ভাব্য পরিবর্তনটি আঁচ করার চেষ্টা হয়েছে সেখানে।
অক্সফাম বলছে, মানুষের চোখের সামনে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট দ্রুত বাড়ছে, তা ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দাকেও ছাড়িয়ে যাবে।
প্রতিবেদনে যে হিসাব দেখানো হয়েছে, তাতে বিশ্বে দারিদ্র্যের হার ১৯৯০ এর পর এই প্রথমবারের মত বাড়তে যাচ্ছে। অর্থনীতির এই সঙ্কট কিছু দেশকে তিন দশক আগে পেছনে ফেলে আসা দারিদ্র্যসীমায় ফিরিয়ে নিতে পারে।
তারা বলছেন, দৈনিক আয় যদি ২০ শতাংশ কমে যায়, সেক্ষেত্রে বিশ্বে চরম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪৩ কোটি ৪০ লাখ বেড়ে ৯২ কোটি ২০ লাখে দাঁড়াতে পারে। আর দরিদ্রসীমায় থাকা মানুষের সংখ্যা ৫৪ কোটি ৮০ লাখ বেড়ে ৪০০ কোটির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।
অক্সফামের প্রতিবেদন বলছে, বর্তমান সঙ্কটে পুরষের চেয়ে নারীরাই ঝুঁকিতে আছেন বেশি, কারণ নারীদের মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করার হার বেশি, আর সেখানে চাকরির কোনো নিশ্চয়তা থাকে না।
বর্তমান বিশ্বে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে এমন দুইশ কোটির বেশি মানুষ চিকিৎসার ব্যয় মেটানোর জন্য কোনো ভাতা বা সুবিধা পায় না জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “যাদের ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থা, এমন দরিদ্রদের কর্মহীন থাকা কিংবা খাবার মজুদ করার সক্ষমতা নেই।”
বিশ্ব ব্যাংকও গত সপ্তাহে বলেছিল, করোনাভাইরাসের প্রভাবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকায় শুধু পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে এক কোটি ১০ লাখে দাঁড়াতে পারে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ছয়টি সুপারিশও করেছে অক্সফাম। এগুলো হল- দরিদ্রদের নগদ সহায়তা দেওয়া, ব্যক্তি অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, ঋণ মওকুফ করা, আইএমএফের আরও সহায়তা এবং ত্রাণ সহায়তা বাড়ানো।
কোভিড-১৯ মহামারী কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ মওকুফের দাবি জোরোলো হয়ে উঠেছে। সঙ্কট থেকে উত্তরণে এসব দেশের জন্য আড়াই লাখ কোটি ডলার সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
অক্সফাম বলছে, “ধনী দেশগুলো ইতোমধ্যে দেখিয়েছে যে, এরকম সঙ্কটের সময়ে নিজেদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রয়োজনে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়ার সক্ষমতা তাদের আছে।”
কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলো যদি তাদের স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনীতির ওপর পড়া এই সঙ্কটের প্রভাব মোকাবেলা করতে না পারে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে তা ধনী, দরিদ্র, সব দেশের জন্যই বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।