আগে যেখানে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ কোটি কোটি টাকা লেনদেন হতো; এখন সেখানে ৭০০ থেকে ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে।
টানা ছুটিতে অফিস-আদালত, বিপনি-বিতান বন্ধসহ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়ায় এই লেনদেন কমছে বলে জানিয়েছেন মোবাইল আর্থিক সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেশের সব মানুষ কঠিন সময় পার করছেন। তার প্রভাব মোবাইল লেনদেনেও পড়েছে।
“আমরা সারা দেশে দশ হাজার পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সেবা দিতে পারলেও বিভিন্ন দোকানের মাধ্যমে যে সেবা সেগুলো বন্ধই রয়েছে বলা যায়। এর ফলে লেনদেন কম হওয়াটাই স্বাভাবিক।”
“সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মানুষ আয়-উপার্জন করতে পারছেন না। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কম আয়ের মানুষ বেশি লেনদেন করেন। এখন দোকানপাট বন্ধ, সিএনজি চালক সিএনজি চালাতে পারছেন না, রিক্সা চালকেরও একই অবস্থা। পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠাবেন কি করে।”
তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “গতকাল (৩০ মার্চ ) বিকাশে ৫৯ লাখ লেনদেন হয়েছে; টাকার অংকে যার পরিমান ৫৫০ কোটি টাকা। অন্য সময় এই লেনদেন ৮৫০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার মতো হতো।”
রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারে ছোট মুদি দোকানের পাশাপাশি বিকাশের লেনদেনও করেন রবিউল করিম রবি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লোকজনই নাই। বিকাশ করবে কে?। সন্ধ্যার দিকে দু-একজন আসে, পাঁচশ-এক হাজার টাকা পাঠায়। এই হলো অবস্থা।”
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় ২৬ মার্চ থেকে দেশে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সেই সঙ্গে সড়ক, নৌ, আকাশ পথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রেখে সবাইকে বাড়িতে থাকতে বলা হয়।
এই ছুটির মেয়াদ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
মঙ্গলবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সাধারণ ছুটি বাড়ানো হচ্ছে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ১১ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ছুটি থাকছে।
ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে মঙ্গলবারই প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
করোনাভাইরাসের কারণে প্রথমবার ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্যাশ আউটে কোন চার্জ না নিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে মাসিক লেনদেন সীমা ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা মেনে লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান বিকাশ ও নগদের দুই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এতোদিন গড়ে এক হাজার ২০০ কোটি থেকে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা লেনদেন হতো; এখন সেখানে ৭০০ থেকে ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেটে দেখা যায়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন প্রতিদিনই বাড়ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এখন নিম্মমুখি হয়েছে।
বিকাশের হেড অফ করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, এখন মূলত ঘরে বসেই লোকজন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করছেন। তবে সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন ও জরুরী লেনদেনে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে আস্থা রাখছেন। তার প্রমাণ এই বন্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও ৬০ লাখ লেনদেন হচ্ছে। মানুষ ডিজিটাল লেনদেনকে জরুরী প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন।
তিনি বলেন, এই বিশেষ পরিস্থিতিতেও জরুরী সেবা হিসেবে বিকাশের সকল সেবা নিরবিছিন্ন, নির্বিঘ্ন এবং নিরাপদ রাখতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন বিকাশের সকল কর্মীরা। এজেন্ট পয়েন্টগুলোতে নগদ টাকা এবং ডিজিটাল মানি সরবরাহও নিশ্চিত করা হয়েছে।