৯ শতাংশ সুদহার: সার্কুলারের বৈধতা নিয়ে হাই কোর্টের প্রশ্ন

ক্রেডিট কার্ড ছাড়া ব্যাংকের সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ  নির্ধারণ করে জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2020, 10:45 AM
Updated : 3 March 2020, 12:39 PM

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জারি করা ওই সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রুল জারি করে।
 
সার্কুলারটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
 
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান।

ক্রেডিট কার্ড ছাড়া ব্যাংকের সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে গত ২৪ এপ্রিল ওই সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ। সেখানে বলা হয়, চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে এই সুদহার কার্যকর হবে।
 
ওই সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করে গত রোববার হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন মাহফুজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি, যিনি নিজেকে আইনের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়-

>> ক্রেডিট কার্ড ব্যতীত অন্যান্য সকল খাতে অশ্রেণিকৃত ঋণ/বিনিয়োগের উপর সুদ/মুনাফা হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হল।

>> কোন ঋণ/বিনিয়োগের উপর উল্লিখিতভাবে সুদ/মুনাফা হার ধার্য করার পরও যদি সংশ্লিষ্ট ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহিতা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয় সেক্ষেত্রে যে সময়কালের জন্য খেলাপি হবে অর্থাৎ মেয়াদী ঋণ/বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খেলাপি কিস্তি এবং চলতি মূলধন ঋণ/ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মোট খেলাপি ঋণ/ বিনিয়োগের উপর সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হারে দন্ড সুদ/অতিরিক্ত মুনাফা আরোপ করা যাবে।

>> প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের বিদ্যমান সর্বোচ্চ সুদ/মুনাফা হার ৭ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে।

>> সুদ/মুনাফা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দন্ডসুদ/অতিরিক্ত মুনাফা ব্যতিরেকে ঋণ/ বিনিয়োগের উপর অন্য কোন সুদ/মুনাফা/দণ্ডসুদ/অতিরিক্ত মুনাফা আরোপ করা যাবে না।

>> চলতি বছর হতে ব্যাংকের মোট ঋণ/বিনিয়োগ স্থিতির মধ্যে এসএমই’র ম্যানুফ্যাকচারিং খাতসহ শিল্প খাতে প্রদত্ত সকল ঋণ/বিনিয়োগ স্থিতি অব্যবহিত পূর্ববর্তী ৩ বছরের গড় হারের চেয়ে কোনভাবেই কম হতে পারবে না।

>> ১ এপ্রিল থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।

>> ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ সার্কুলার জারি করা হল।

মঙ্গলবার শুনানির পর রিটকারীর আইনজীবী সুমন সাংবাদিকদের বলেন, মাত্র দুই লাখ ঋণগ্রহীতাকে সুবিধা দিতে গিয়ে ৫০ লাখ আমানতকারীর স্বার্থ ‘ক্ষুণ্ন হতে পারে না’।

“আমানতের সুদের হার কত হবে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও কিছু বলেনি। তবে স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেওয়া যায়, ঋণের সুদের হার কমলে আমানতের সুদের হারও কমবে। মৌখিক ঘোষণা অনুযায়ী যদি আমানতের সুদের হার ৬ শাতাংশও করা হয়, তাহলে মাত্র দুই লাখের বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৫০ লাখ।”

আমানতের সুদের হার নির্দিষ্ট না করে ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করার মধ্যে দুরভিসন্ধিও থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন সুমন।

তিনি বলেন, “এখানে একটি বিষয় হচ্ছে ওই সার্কুলারে শুধু তফসিলি ব্যাংকের কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর ঋণ-আমানতের সুদের হারের বিষয়ে কিছু বলা নাই। তাই ওইসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে নিজেদের মত করে সুদের হার নির্ধারণ করে নিতে পারবে। এসব যুক্ত তুলে ধরে রিট আবেদনটি করা হয়েছিল।

“আমাদের বক্তব্য শুনে আদালত বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারটিতে হস্তক্ষেপ করার মত ইনগ্রেডিয়েন্ট (উপাদান) পেয়েছেন। তাই সার্কুলারটির বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন।”