দৃশ্যত এটি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ হলেও পিডিবি চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বলেছেন, তারা তাদের সমস্যাটি তুলে ধরেছেন, এখন বিইআরসি তা দেখবে।
গত সপ্তাহে বিইআরসিতে লোকসানের খতিয়ান সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠায় পিডিবি।
পিডিবি চেয়ারম্যান সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব না। আমরা জানিয়েছি, বিইআরসি পর্যালোচনা করবে।
“আমরা যে দামে বিদ্যুৎ দিই, সেটা একজাক্ট দাম না। গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ২০২০ সালে আমাদের কী পরিমাণ লোকসানের মুখে পড়তে হবে, সেটাই আমরা তাদেরকে জানিয়েছি।”
পিডিবির একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০২০ সালে পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪৫ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় হবে ৩৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
“এই ৮ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা লোকসান মেটাতে বিইআরসি কি দাম বাড়াবে, না ভর্তুকি দিতে বলবে, সেদিকেই পিডিবি তাকিয়ে আছে।”
পিডিবির লোকসান মেটানোর বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি কী পদক্ষেপ নেবে, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল বিইআরসি সদস্য মিজানুর রহমানের কাছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনো প্রস্তাবের বিষয় আগে কমিশন ভেটিংয়ে যাবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এটা শুনানি করা হবে, না কি খারিজ করে দেওয়া হবে।”
পিডিবির একটি প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অন্য কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব পাওয়ার পর ভেটিংয়ের সিদ্ধান্ত হবে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়, যা ওই বছরেরই ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। সেবার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।
১০ বছর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর এ পর্যন্ত আটবার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম।
দাম বাড়ানোর পরও ২০১৭-২০১৮ সালে পিডিবির লোকসান হয়েছে ৯ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে লোকসান প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা হয়েছে বলে জানান বোর্ডের একজন কর্মকর্তা।
গত জুলাই থেকে সব পর্যায়ে গ্রাহকের জন্যই গ্যাসের দাম গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়িয়েছে বিইআরসি।
পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বলেন, “আগে আমাদের ভর্তুকি দেওয়া হত তেলের মূল্যের উপর। গ্যাসের দাম ৪১ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও যে বেড়ে গেছে, সেটাই আমরা বিইআরসিকে জানিয়েছি।”
২০১৮ সালের পিডিবির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রলো থেকে আসে দেশের মোট বিদ্যুতের ২৫ শতাংশের মতো।
উৎপাদক কোম্পানিগুলো থেকে পিডিবি যে দামে বিদ্যুৎ কিনে, তা থেকে কম দামে বিক্রি করতে হয়। বিশেষ করে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি দামে কিনতে হয়। ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয় পিডিবিকে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, পিডিবির নিজস্ব উৎপাদন ও বিভিন্ন উৎপাদক কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ কিনতে গড়ে খরচ হয়েছে ৬ টাকা ৩৩ পয়সা।
এর মধ্যে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। এ ধরনের কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতি কিলোওয়াট আওয়ার কিনতে হয়েছে ৮ টাকা ৭৭ পয়সা করে।