রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে এখন নিজের আয়ে চলতে হবে: অর্থমন্ত্রী

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো অর্থ দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2019, 12:23 PM
Updated : 25 August 2019, 04:41 PM

রোববার সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেছেন, এখন থেকে তাদের নিজেদের আয়ে চলতে হবে।

বাংলাদেশে কার্যরত অর্ধ শতাধিক ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে পাঁচটি; এর মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী বাদে রয়েছে বেসিক ব্যাংক।

খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে মূলধন ঘাটতি হওয়ায় তা পূরণে রাষ্ট্রায়ত্ত এই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রতিবছরই সরকারের দ্বারস্ত হয় এবং সরকারও তাদের চাহিদা মিটিয়ে আসছে।

অর্থ বিভাগের এক তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত মূলধন পুনর্ভরণ, সুদ ও ভর্তুকিসহ নানা উপায়ে সরকার এই ব্যাংকগুলোকে ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা দিয়েছে।

গত অর্থবছর থেকে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে পুনঃঅর্থায়নে রাশ টানতে থাকে।

রোববার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী ওই চার ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে আরও কঠোর বার্তা দেন।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বৈঠকে আমি তাদের বলে দিয়েছি, এখন থেকে সরকারি ব্যাংকগুলোতে আর কোনো ধরনের রি-ফাইন্যান্সিং করা হবে না। তাদের নিজেদেরই আয় করতে হবে এবং সরকারকে ট্যাক্সও দিতে হবে।”

এই ব্যাংকগুলোকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে কর্মপরিকল্পনা তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন মুস্তফা কামাল।

“আমি তাদের বলেছি, এ বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে। ওই কর্মপরিকল্পনার উপর আগামী রোববার আবার তাদের নিয়ে বৈঠকে বসব। আগামী বৈঠকে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে।”

অর্থ না দিলেও পরামর্শ দেওয়াসহ অন্য সহযোগিতা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পাবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী।

রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাদের যে সম্পদ আছে, তার সুষ্ঠু ব্যবহার করে অন্তত ১৫ শতাংশ লাভ করুক, এটা চায় সরকার।”

এই ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে নুতন নিয়োগের বিষয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, “নতুন টপ ম্যানেজমেন্ট সুস্পষ্টভাবে পারদর্শী। তারা সবাই যদি অভিজ্ঞতার আলোকে ও দেশের চাহিদার নিরীখে এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক পরিচালনা করে, তাহলে অসাধারণ কিছু প্রত্যাশা করা যায়।”

ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণ (এনপিএল) কমানোর প্রতিশ্রুতির বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “মন্দ ঋণ এখনও কমাতে পারি নাই। কারণ আমরা এক্সিটপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পারি নাই। তবে শিগগির এটির সুরাহা হবে বলে আমার বিশ্বাস।”

গত ২১ মে হাই কোর্টে ঋণ খেলাপীদের বিশেষ সুবিধার উপর স্থিতাবস্থা দেয়। যদিও পরে আবার নতুন ঋণ না নেওয়ার শর্তে স্থিতাবস্থা তুলে নেয়।

বিশ্বের সাম্প্রতিক প্রবণতা দেখে মন্দার শঙ্কা জানিয়ে তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “মন্দা তৈরি হলে বিলাসী পণ্যের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু আমরা বেশিরভাগই মৌলিক পণ্য রপ্তানি করে থাকি। তাই আমাদের রপ্তানি কমার সম্ভাবনা নেই।

“একইভাবে আমাদের পুঁজিবাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ আমাদের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ তেমন নেই।”