এখানে নিচের লোকরা উপরে ওঠে না, উপরেরগুলো নামে না: অধ্যাপক সাদেকুল

কানাডার লরেন্টিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক সাদেকুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় যারা নিচে অবস্থান করে তারা শিক্ষা ও আয়ে অসমতার কারণে উপরে উঠতে পারে না, আর যারা উপরে থাকে তারাও কখনও নিচে নামে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2019, 04:31 PM
Updated : 20 June 2019, 04:31 PM

তার মতে, এখানে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল বাবা-মায়ের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার হার একেবারেই কম।

বুধবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে ‘ইনিকোয়ালিট অ্যান্ড ইন্টারজেনারেশনাল মোবিলিটি ইন এডুকেশন অ্যান্ড ইনকাম ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড সিলেক্টেড কান্ট্রিজ’ শীর্ষক আলোচনায় একথা বলেন অধ্যাপক সাদেকুল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ ইকোনমিক্স অ্যান্ড সোশাল সায়েন্স-ইএসএস আয়োজিত এই সেমিনারে প্রজন্ম পরম্পরায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের শিক্ষা ও আয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক অসমতা ও অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন অর্থনীতির এই অধ্যাপক।

তিনি বলেন, “অ্যাবসলিউট ইন্টারজেনারেশনাল মোবিলিটি (আইজিএম) এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। ৬৫ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী তাদের পিতা-মাতার চেয়ে বেশি শিক্ষিত।

“তবে আরআইএম-এর ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। আমাদের এখানে সন্তানের লেখাপড়া ও সফলতার পেছনে বাবা-মার আর্থিক প্রভাব থাকে। পিতামাতা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হলে সন্তানের উচ্চ শিক্ষার হার একেবারেই কম। নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানটি বলার মতো নয়।”

অধ্যাপক সাদেকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের মতো দেশের সমাজ ব্যবস্থাটা আঠালো মেঝে এবং ঘরের ছাদের মতো। যারা নিচে অবস্থান করে শিক্ষা ও আয়ে অসমতার কারণে তারা উপরে উঠতে পারে না, আর যারা উপরে থাকে তারাও কখনও নিচে নামে না।”

গেটসবি সমীকরণের রেফারেন্স টেনে এই অর্থনীতিবিদ জানান, সমাজে অসমতা বাড়লে আয়ের রিলেটিভ মোবিলিটি কমে আর মাথাপিছু আয় বাড়লে মোবিলিটি বাড়ে। 

কানাডাপ্রবাসী এই অর্থনীতিবিদের মতে, বাংলাদেশে জাতীয় বাজেটে শিক্ষার জন্য যে বরাদ্দ থাকে তা অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়েও ‘অনেক কম’।

শিক্ষা ও আয়ে গতিশীলতা বাড়াতে সমাজের সব স্তরে শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সেমিনারে সমাপনী বক্তব্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাং বলেন, “শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে, আমাদের সমাজের একটা বড় অংশ নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রতিনিয়ত লড়ছে। বুদ্ধিমান ও কর্মঠ হওয়া সত্ত্বেও কেবল সুযোগের অভাবে তারা পেছনে পড়ে আছে।

“শিক্ষার্থীদের সমাজ বাস্তবতা বোঝাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রতিটি শিক্ষার্থী কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ ব্র্যাকের সাথে কাজ করবে।”

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মোহাম্মদ তামিম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আহমেদ আতাউল হাকিম, ইকোনমিক্স অ্যান্ড সোশাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারপারসন এটিএম নুরুল আমিন।