‘ডেল্টা প্ল্যান’ বাস্তবায়নে পানি কূটনীতিতে গুরুত্ব

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ‘পানি কূটনৈতিক সম্পর্ক’ গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে ডেল্টা প্ল্যান বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়ন সঙ্কট মোকাবেলা সম্ভব বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2018, 03:02 PM
Updated : 24 Dec 2018, 03:03 PM

সোমবার ঢাকার ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই মত আসে।

‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০: বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।

তিনি বলেন, “এখন আমরা প্রতিবেশী দেশ ভারত, ভূটান ও নেপালের সাথে বিদ্যুৎ কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছি। তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আনছি। তবে তার জন্য অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।

“অথচ আমরা যদি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ব্যাপকভাবে পানি আনতে পারি, তাহলে সেই পানি দিয়ে আমরা একদিকে জলবিদ্যুৎ তৈরি করতে পারি। আবার সেই পানি প্রবাহের মাধ্যমে নদ-নদী সচল হওয়ার পাশাপাশি আমাদের পানিপথ আবারও শক্তিশালী করার সুযোগ তৈরি হবে।”

সফল পানি কূটনীতির মধ্যে দিয়ে প্রয়োজনীয় পানি আনতে পারলে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে  ‘অর্থায়ন চ্যালেঞ্জ’ অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন মসিউর। 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম।

অর্থায়নকে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মূল চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে এই পরিকল্পনার আওতায় ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য তিন হাজার ৭৫২ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়বে।

“এরমধ্যে ৮০ ভাগ সরকারি তহবিল থেকে আর বাকি ২০ ভাগ বেসরকারি উদ্যোগে সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে।”

ড. আলম বলেন, “এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিবছর আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দুই দশমিক ৫২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে হবে। এরমধ্যে দুই শতাংশ সরকারি তহবিল থেকে বাকি অর্থ বেসরকারি উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হবে।”

২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে রেকর্ড সাত দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর মধ্যে দিয়ে পরপর তিন বছর সাত শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ। একই সময়ে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২৭৪ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার।

সে হিসাবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতি বছর বাড়তি প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন হবে বলা হয় সেমিনারে।

শামসুল আলম বলেন, “এ অর্থ ব্যয় বিশাল চ্যালেঞ্জের। তাই আমাদের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।”

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ড. সালিমুল হক বলেন, “আমাদের ডেল্টা প্ল্যান তিন পর্বে বাস্তবায়ন হবে। প্রথম পর্ব ২০২০ থেকে ২০৩০ সাল। দ্বিতীয় পর্ব ২০৩০ সাল থেকে ২০৫০ সাল পর্য়ন্ত এরপর ২১০০ সাল পর্যন্ত শেষ পর্ব।”

অর্থায়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ‘এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রায় পুরো অর্থই দেশীয় উৎস থেকে অর্থায়ন করতে হবে’ বলে মনে করেন তিনি।

সালিমুল হক বলেন, “কারণ আমরা যখন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি তখন আমরা আর স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকছি না। তখন আমরা মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে আর্বিভূত হচ্ছি। অথচ জলবায়ু তহবিল থেকে স্বাল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে।

“সে হিসাবে আমরা ওই তহবিল থেকে তেমন অর্থ পাব না। তাই আমাদের নিজস্ব অর্থায়নেই ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।”

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ একটি বড় নাম।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কী করণীয় হতে পারে তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে বলে পরামর্শ দেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. সালিমুল হক।