চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ লাইন শক্তিশালীতে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপন দ্রুতগতিতে বাড়ছে বলে ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা মাথায় রেখে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন শক্তিশালী করতে প্রায় ২ হাজার ৫৫২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2018, 05:15 PM
Updated : 11 Oct 2018, 05:15 PM

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এটিসহ ১৪ হাজার কোটি টাকার ১৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

এই সপ্তাহে দুইবার একনেক বৈঠক ডাকার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “দেশের বর্তমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকারি বিনিয়োগের প্রভাব চলমান রাখতে প্রকল্প বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখতে হবে।

“তাছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রতি সপ্তাহে একটি করে বৈঠক করলে আমরা ১৪টি বৈঠক করতে পারতাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১০টি বৈঠক হয়েছে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সফরের কারণে কয়েকটি সভা হতে পারেনি। এসব পুষিয়ে নিতেই এ সপ্তাহে দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।”

সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে গত মঙ্গলবারের একনেক বৈঠকে ৩২ হাজার কোটি টাকার ২০টির মতো প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

বৃহস্পতিবারের একনেক বৈঠকের পর পরিকল্পনামন্ত্রী চট্টগ্রাম এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, “চট্টগ্রামে প্রতিবছর ১০ শতাংশের বেশি হারে বিদ্যুৎ চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রামের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৮০৭ মেগাওয়াট। সে অনুযায়ী ওই এলাকায় বর্তমানে ৩৩/১১ কেভি‘র সঞ্চালন লাইন নিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয়।

“কিন্তু সঞ্চালন লাইনের এ সক্ষমতা দিয়ে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৩ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত বিতরণ করা যাবে। অথচ আগামী ২০৩০ সালে ওই এলাকার বিদ্যুতের চাহিদা সৃষ্টি হবে ২ হাজার ৮৩১ মেগাওয়াটের। তাই বিদ্যমান লাইন দিয়ে আগামীর চাহিদা সঞ্চালনা সম্ভব নয়।”

এই পরিস্থিতিতে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত চাহিদা পূরণে প্রস্তুতি হিসেবে চট্টগ্রামের সঞ্চালন লাইনের আধুনিকায়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

অন্য প্রকল্পগুলো

>> ‘রাজশাহী ওয়াসার ভূ-উপরিস্থিত পানি শোধনাগার নির্মাণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা।

>> ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং বাস/ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ’ প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।

>> ‘ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিবাস নির্মাণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় ২৫৪ কোটি টাকা।

>> ‘ফরিদপুর-ভাঙা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ’ প্রকল্প। প্রকল্প ব্যয় এক হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

>> ‘বৈরাগীর পুল (বরিশাল)-টুমচর-বাউফল (পটুয়াখালী) জেলা মহাসড়ক (জেড-৮৯১০) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় ৩০২ কোটি টাকা।

>> ‘ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণের নিমিত্তে নন্দীগ্রাম (ওমরপুর)-তালোড়া-দুপচাঁচিয়া-জিয়ানগর-আক্কেলপুর (গোপিনাথপুর) জেলা মহাসড়ক এবং নন্দীগ্রাম (কাথম) কালিগঞ্জ-রাণীনগর জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীকরণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় ১৭৯ কোটি টাকা।

>> ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিদ্যমান চত্বরে একটি বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ৬১ কোটি টাকা।

>> ‘যশোর অঞ্চল গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প। এর ব্যয় ৯৫২ কোটি টাকা।

>> ‘খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ৯৩৮ কোটি টাকা।

>> ‘বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স (বর্তমানে বাপার্ড), কোটালীপাড়া, গোপালবগঞ্জের সম্প্রসারণ, সংস্কার ও আধুনিকায়ন’ প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ৩৪৫ কোটি টাকা।

>> ‘পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন’ প্রকল্প। ব্যয় ১৭২ কোটি টাকা।

>> ‘বৃহত্তর ঢাকা জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন (তৃতীয় পর্যায়)’ প্রকল্প। ব্যয় প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা।

>> ‘রংপুর জেলার মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ ও রংপুর সদর উপজেলায় যমুনেশ্বরী, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর তীর সংরক্ষণ, নদী পুনঃখনন’ প্রকল্প। এর ব্যয় প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা।

>> ‘উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন’ প্রকল্প। এর ব্যয় ৯৫ কোটি টাকা।

>> ‘দ্য প্রজেক্ট ফর দ্য ইমপ্রুভমেন্ট অব রেসকিউ ক্যাপাসিটিস ইন দ্য কোস্টাল অ্যান্ড ইনল্যান্ড ওয়াটার্স’ প্রকল্প। এর ব্যয় ২৮৭ কোটি টাকা।

>> ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ’ প্রকল্প। এর ব্যয় ৬২৮ কোটি টাকা।