আরও ২৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে এআইআইবি

বাংলাদেশের আরও ২৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে চীনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এশিয়ান অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক-এআইআইবি।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2018, 12:35 PM
Updated : 8 Sept 2018, 12:35 PM

পৌর এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই ঋণ দেবে সংস্থাটি। আগামী ডিসেম্বর মাসে এআইআইবির বোর্ডে অনুমোদন হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

গত ৩ সেপ্টেম্বর এআইআইবির পরিচালক এমিল লেভেনদলুর নেতৃত্বে ধামরাইয়ের সুয়াপুর ও কুটির চর গ্রাম পরিদর্শন করেন। সেখানে এআইআইবির অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে সন্তুষ্ট লেভেনদলু বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করার ঘোষণা দেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের অর্থায়নে বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষের উপকার হয়েছে। এতে আমরা খুশি। সুপেয় পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাষণে অর্থায়ন করার চিন্তাভাবনা কররছি। ডিসেম্বরে বোর্ডে সভায় তা অনুমোদন হবে।”

এসময় সম্ভাব্য ২৭ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার অঙ্কের কথা জানান লেভেনদলু।

এআইআইবির দেওয়া অর্থে প্রথম প্রকল্পটি সরেজমিনে পরিদর্শন করতেই প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশে এসেছিল।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মাধ্যমে গত দুই বছরে ২৫ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এআইআইবি দিয়েছে প্রায় ১০ কোটি ডলার। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকা। 

এআইআইবির প্রতিনিধি দল ঢাকার ধামরাইয়ে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের উদ্দেশ্য- বিদ্যুৎ সংযোগের সুফল গ্রাহকরা পাচ্ছেন কি না এবং পরবর্তী প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়টি মূল্যায়ন করা।

এই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে একটি গণমাধ্যম দলও ছিল।

বাংলাদেশে এই পর্যন্ত তিনটি প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে এআইআইবি।

সুয়াপুরের একটি স্কুলে প্রতিনিধি দলটি পৌঁছনোর আগেই বেশ কয়েকজন সুবিধাভোগীকে জড়ো করেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তারা। স্কুলের একটি কক্ষে বসে তাদের সঙ্গে এআইআইবি প্রতিনিধিরা কথা বলেন। এরপর তারা কুটির চর গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে যান।

সুবিধাভোগীদের বেশির ভাগই জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় তাদের জীবনমান উন্নত হয়েছে। সন্তানদের পড়াশোনায় সুবিধা হয়েছে।

রাজধানী ঢাকা থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ধামরাইয়ের কুটির চর গ্রামটি গাছগাছালিতে ভরা। এই গ্রামের বাসিন্দা হাসনা বেগমের বাড়িয়ে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। স্বচ্ছল না হওয়ায় সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করাও তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই বিদ্যুতের আলো তার ঘরে এত দিন পৌঁছেনি।

হাসনা বেগম গৃহিনী। স্বামী প্রবাসী; কাতারে থাকেন। দুই সন্তান পড়াশোনা করে। সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে সেলাইয়ের কাজ করেন তিনি।

গত ডিসেম্বর মাসে হাসনা বেগমের ঘরে বিদ্যুতের সংযোগ গেছে। এক লাইট ও এক ফ্যানের একটি সংযোগ নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া মোবাইল ফোন চার্জও দিতে পারেন। এর ফলে মোবাইল ফোনে প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন। নিজে যেহেতু সেলাইয়ে কাজ করেন, তাই সেলাইয়ের কাজেও নানাভাবে সহায়তা পান এই মোবাইল ফোন থেকে।

এছাড়া স্কুলপড়ুয়া দুই সন্তান বিদ্যুতের আলোয় পড়াশোনা করে। সার্বিকভাবে গত কয়েক মাসেই বিদ্যুতের আলো বদলে দিয়েছে হাসিনা বেগমের জীবনযাত্রা।

হাসনা বেগম বলেন, “ছিলাম অন্ধকারে, এখন আলো পাইছি, খুব উপকার হচ্ছে।”

এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত ২৫ জেলা থেকে ৪০টি এলাকা নির্বাচিত করে হাসনার ঘরের মতো ২৫ লাখ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। মূল সঞ্চালন লাইন থেকে ১৩০ ফুটের মধ্যে গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সংযোগের গ্রাহককে  ৬০০ টাকা দিতে হয়েছে। এ ছাড়া আনুষঙ্গিক তার ও অন্য যন্ত্রাংশের দাম পরিশোধ করতে হয়েছে গ্রাহককে।

পরিদর্শনকালে এআইআইবি পরিচালক এমিল লেভেনদলু বলেন, যেহেতু প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। তাই প্রকল্পে এআইআইবির বিনিয়োগের প্রভাব মূল্যায়ন করতে এসেছি। কেননা ভবিষ্যতে আরও প্রকল্প নেওয়া হবে। তখন এই মূল্যায়ন কাজে লাগবে। এ দেশে কী ধরনের অবকাঠামো বেশি দরকার, তাও মূল্যায়ন করা হবে।

প্রতিনিধি দলের সঙ্গে থাকা পল্লী বিদ্যুাতায়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, এই প্রকল্প কোনো সময় বৃদ্ধি ছাড়াই যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও কোনো অনিয়ম হয়নি।

এআইআইবি প্রতিষ্ঠার পর তিনটি প্রকল্পে ২৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার অনুমোদন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়টি ২০১৬ সালের ২৪ জুন অনুমোদন করা হয়। পরে ভোলা আইপিপি প্রকল্পে এবং ন্যাচারাল গ্যাস ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ইফিসিয়েন্সি ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টেও এআইআইবি অর্থ অনুমোদন করা হয়েছে।

এআইআইবির যোগাযোগ ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান লরেল অস্টফিল্ড এই বিষয়ে বলেন, প্রতিনিধি দলটি স্থানীয় বিনিয়োগের পরিবেশ এবং এ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে করণীয় সম্পর্কে জানতেই এই সফরে এসেছেন।

এআইআইবির অর্থায়নে বিভিন্ন দেশে মোট ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব প্রকল্পে এআইআইবি দিয়েছে ৫৩৪ কোটি ডলার।

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে চীনের বেইজিংভিত্তিক এআইআইবির যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশসহ এআইআইবি’র বর্তমানে পূর্ণ সদস্য সংখ্যা ৬৭। বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

১০ হাজার কোটি ডলারের পরিশোধিত মূলধনের এই সংস্থার এক তৃতীয়াংশই চীনের। ‘সাশ্রয়ী দাম, উৎকৃষ্ট মান’-হল এশিয়ার অবকাঠামো উন্নয়নে এআইআইবির বিনিয়োগ দর্শন।

বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা)-এসব সংস্থা থেকে সাধারণত ঋণ-সহায়তা নেয় বাংলাদেশ। এআইআইবি হওয়ায় স্বল্প সুদে ঋণ নিতে বাংলাদেশের নতুন জায়গা তৈরি হয়।