ঈদ সামনে রেখে বাড়ছে রেমিটেন্স

কয়েক মাস ধরে বাড়তে থাকা রেমিটেন্সে নতুন গতি এসেছে ঈদ সামনে রেখে।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2018, 04:43 PM
Updated : 27 May 2018, 04:44 PM

ঈদ উপলক্ষে বেশি রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। সে কারণে চলতি মে মাসের ২৫ দিনেই ১১৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে বাংলাদেশে।

অর্থবছর শেষ হতে আরও এক মাস এক সপ্তাহ বাকি। কিন্তু এরইমধ্যে গত অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়েও ৪ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স চলে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিটেন্স সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি মে মাসের ২৫ দিনে (১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১১৬ কোটি ৭১ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।

সব মিলিয়ে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ পর্যন্ত (গত বছরের ১ জুলাই থেকে ২৫ মে পর্যন্ত) ১ হাজার ৩২৫ কোটি ৫০ লাখ (১৩.২৫ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স এসেছে।

এই অংক গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, জুলাই-জুন) চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ (১২.৭৬ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এপ্রিল মাসে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয় সাড়ে ২১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিটেন্স বেড়েছে ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ।

চলতি মাস শেষ হতে আরও কয়েক দিন বাকি আছে। এই কয় দিনের রেমিটেন্স যোগ হলে মে মাসের মোট রেমিটেন্স ১৪০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এমনিতেই রেমিটেন্স প্রবাহ বেশ ভালো ছিল। রমজান মাস এবং ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠানোয় এই প্রবাহ আরও বেড়ে গেছে।

এবার অর্থবছর শেষে প্রবাসী আয় প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশার কথা শোনান মন্ত্রী।

এপ্রিল মাসে ১৩২ কোটি ৭২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল। মার্চ এসেছিল  ১৩০ কোটি ডলার।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি, স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে রেমিটেন্স প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) রেমিটেন্স বেশ কমেছিল। অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক বাড়াতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যার ইতিবাচক ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখে প্রবাসীদের পাঠানো এই বিদেশি মুদ্রা। দেশের রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশ- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫.৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসে। এরপর প্রতিবছরই রেমিটেন্স কমেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম।

জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়াও রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন মুহিত। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে জনশক্তি রপ্তানি ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে প্রতি ডলার এখন ৮৩ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। এক বছর আগে এর দর ছিল ৮০ টাকা ৫০ পয়সা। এ হিসাবে এক বছরে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ।

রেমিটেন্স বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও রয়েছে সন্তোষজনক অবস্থায়। রোববার দিন শেষে রিজার্ভে ছিল ৩২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

মে মাসের ২৫ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৮ কোটি ২৮ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক ও রাকাব) মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ডলার।

৩৯ বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮৬ কোটি ৩১ লাখ ডলার। নয়টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ১ লাখ ডলার।