পানীয়ের পাশাপাশি খাদ্য ও প্রসাধনী হিসাবে চায়ের ব্যবহারের কথা বলেছেন তিনি।
বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলতি বছরের চা প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা চাই, আমাদের চা সারা বিশ্বে নিজের স্থান করে নিক, আরও উন্নত হোক।”
বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৮ থেকে ২২ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলবে।
শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নতুন প্রজাতির চা বিটি-২১ ক্লোন অবমুক্ত করেন। পরে, ডানকান ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে নতুন প্রজাতির এই চায়ের চারা গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে চা শিল্পের উন্নয়নে সাতটি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকারী চা বাগানের মালিকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
একর প্রতি এক হাজার ৪৪৬ কেজি চা উৎপাদন করে শ্রেষ্ঠ চা বাগানের প্রথম পুরস্কার পেয়েছে হালদা ভ্যালি টি স্টেইট। সর্বোচ্চ নিলাম গড় মূল্য ও মানসম্পন্ন নিলামে বিক্রি করে চায়ের গুণগত মানের ভিত্তিতে এবং শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা বাগানের প্রথম পুরস্কার পেয়েছে মধুপুর চা বাগান। দৃষ্টিনন্দন মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ কোম্পানী হয়েছে ইস্পাহানী টি কোম্পানি। নয় প্রকারের চা বাজারজাত করে বৈচিত্র্যময় চা পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে কাজী অ্যান্ড কাজী টি স্টেইট প্রথম স্থান অধিকার করেছে। সবচেয়ে বেশি চা রপ্তানি করে ফিনলে শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারকের প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্র চা চাষীর পুরস্কার পেয়েছেন পঞ্চগড়ের সোহেল রানা। তেঁতুলিয়ার মোশাররফ হোসেন ক্ষুদ্র চা চাষে বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন।
এর আগে, ২৩০ দশমিক ৯৭ কোটি টাকায় মতিঝিলে ২৪ কাঠা জায়গার ওপর ৩০ তলা ‘বঙ্গবন্ধু চা ভবনের’ নির্মাণ কাজের ভিত্তিস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
“এত ধরনের চা যখন হয়; তখন এই চায়ের বহুমুখীকরণের কথা বলেছি।”
চায়ের আচারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চা দিয়ে এখন অনেক কিছু বানাচ্ছে। এখন চায়ের আচারও হচ্ছে।”
চায়ের বহুমুখীকরণে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “চেয়ারম্যান সাহেব চায়ের আচার বানিয়ে আমাকে দিয়ে গেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে ততটা ভালো লাগেনি। কয়েকদিন রাখার পর এই দু’তিনদিন আগে আমি আবার ওটাকে একটু টেস্ট করে দেখলাম। এখন দেখি আরে খেতে তো মজাই লাগে।”
চায়ের প্রসাধনীর জনপ্রিয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আরেকটা জিনিস জনপ্রিয়তা পাচ্ছে.. শ্যাম্পু, সাবান, লোশন আমরা ব্যবহার করি। টি সোপ, টি শ্যাম্পু, টি টুথপেস্ট, টি লোশন; এগুলো বিশ্বে এখন বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। চায়ের পাতাটা আমরা নিচ্ছি। দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি.. তারপর যেগুলো থাকছে; সেগুলোর বহুমূখী ব্যবহার করা।”
‘চা কোলা’ উৎপাদনের সম্ভাব্যতার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চা গবেষণা কেন্দ্রে টি কোলা কীভাবে উৎপাদন করা যায়; সেটাও দেখছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা বাগানের মালিকরা যদি চায় তাহলে গৃহায়ন তহবিল থেকে দুই শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জে ঋণ নিতে পারবে।
শ্রমিকদের দিকে লক্ষ্য রাখতে মালিকদের দৃষ্টি দেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “শ্রমিকরা যেন এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে; সেদিকে লক্ষটা রাখা দরকার। আরও আধুনিক পদ্ধতিতে আমরা যেন চা আহরণ করতে পারি, উৎপাদন করতে পারি।
“যারা আপনার কাজটা করে দিচ্ছে, যারা এই চা পাতা তুলে দিচ্ছে, যারা শ্রমটা দিচ্ছে; তাদের মঙ্গলের দিকেও আপনারা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।”
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের তালিকায় চা সম্পৃক্ত করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বাগান মালিকদের বলেন, “মালিকদের বলবো; আপনাদের বিজ্ঞাপনের কাজ করে দিচ্ছি।”
অনুষ্ঠানে, চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ এবং বাণিজ্য সচিব সুভাশীষ বসু বক্তব্য রাখেন।