আলু সংরক্ষণকারীদের ‘মাথায় হাত’

শেষ সময়ে এসেও সংরক্ষিত আলুর প্রায় অর্ধেক অবিক্রিত থেকে যাওয়ায় ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2017, 04:23 PM
Updated : 10 Dec 2017, 04:23 PM

রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন বলেন, দেশের ৪০০ হিমাগারে সংরক্ষিত ৫৩ লাখ মেট্রিক টন আলুর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ (৩১ লাখ টন) বিক্রি হয়েছে।

“চলতি মৌসুমে এসব আলু বাজারজাতের আর তিন সপ্তাহ বাকি আছে। এই সময়ের মধ্যে ৫ লাখ টন বীজ আলু ও দুই লাখ টন খাবার আলু হিসেবে বাজারজাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাকি ১৫ লাখ টন আলু অবিক্রিত থেকে যাবে, যা ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।”

যে সব আলু বিক্রি হয়েছে তার মধ্যেও একটি অংশ লোকসানে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, “এসব আলু কিনতে প্রতি বস্তা (৮০ কেজি) প্রায় এক হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় হয়। বাধ্য হয়ে তা বস্তা প্রতি ৭০০-১০০০ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে।”

এবার দেশে প্রায় এক কোটি মেট্রিক টন আলুর ফলন হয় জানিয়ে হিমাগার মালিকদের নেতা মোশারফ বলেন, “বিক্রয় মৌসুমের শুরু থেকে ক্রমাগত দরপতন হয়ে বর্তমানে কোনো কোনো অঞ্চলে আলু বস্তাপ্রতি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”

নিজেদের এক হিসাব তুলে ধরে তিনি দাবি করেছেন, এ বছর আলু চাষী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের লোকসান সর্বমোট ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

মোশারফ বলেন, আলুর দাম ‘আশঙ্কাজনকভাবে’ কমে যাওয়ায় হিমাগার মালিক ছাড়াও আলু চাষীদের মধ্যেও ব্যাপক হতাশা ভর করেছে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে কৃষকরা আলু চাষ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন।                                                                                         

আলু ব্যবসায় লোকসানের কারণে কুমিল্লায় এক আলু ব্যবসায়ী ‘আত্মহত্যা’ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “হতাশগ্রস্থ তিন আলু ব্যবসায়ী হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।”

মোশারফ হোসেন বলেন, দেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি কৃষক এবং দেড় কোটি মানুষ আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণের সাথে জড়িত।

আলুর দামে ক্ষতির মুখে পড়া এসব মানুষের সহায়তায় কিছু পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।

এগুলো হল- জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভাতের সাথে বিকল্প হিসেবে সর্বস্তরে আলু খাওয়া প্রচলনের জন্য সরকারিভাবে প্রচার চালানো, আলু চাষীদের জন্য সহজ শর্তে ও বিনা সুদে ব্যাংক ঋণ প্রদান এবং ত্রাণ, কাবিখা ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ড ও ওএমএস কর্মসূচিতে আলু বিতরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এছাড়া আলুর রপ্তানি বাড়াতে নগদ প্রণোদনা বৃদ্ধি, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি ও মনিটরিং সেল গঠন, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের আপ্যায়ণে আলুর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, কৃষিভিত্তিক হিমাগার শিল্পের বিদ্যুৎ বিলের ‘২০ শতাংশ কমানোর মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত’ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট কামরুল হোসেন চৌধুরী, সংগঠনের নেতা ইসতিয়াক আহমেদ, মুনতাকিম আশরাফসহ একাধিক হিমাগার মালিক উপস্থিত ছিলেন।