এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: ছয় বছরে অগ্রগতি ৯%

নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ২০১১ সালে, ওই বছরই ভিত্তি স্থাপন; কিন্তু ছয় বছরে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ এগিয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ।

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2017, 04:04 AM
Updated : 17 Oct 2017, 09:28 AM

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) এ প্রকল্পে বিনিয়োগ ও নির্মাণ কাজের দায়িত্বে আছে ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা আর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সময়মত অর্থ জোগাড় করতে না পারায় দীর্ঘদিন আটকে ছিল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ।

তবে সেসব বাধা ‘অনেকটাই কেটে যাওয়ায়’ আগামী তিন বছরে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করে ২০২০ সালে নির্ধারিত সময়েই তা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে বলে আশা করছেন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক কাজী মুহাম্মদ ফেরদৌস।

সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৯ শতাংশ। কাজের গতি স্লো, এটা ঠিক। তবে এতদিন মাটির নিচের কাজ বেশি হওয়ায় ভিজিবল হয়নি। এখনও উপরের কাজ তেমন শুরু হয়নি। ডিসেম্বর থেকে ফুল স্যুইংয়ে কাজ শুরু হবে।”

>> শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে পড়বে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।

>> এক্সপ্রেসওয়ের মূল লাইনের দৈর্ঘ্য বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এছাড়া ৩১টি র্যাম্পের দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। র‌্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

>> প্রকল্প এলাকাকে তিন অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশে বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার, দ্বিতীয় অংশে বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার এবং তৃতীয় অংশে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার।

>> প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা দেবে সরকার। বাকি টাকা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই বিনিয়োগ করবে।

>> প্রকল্পের জন্য মোট ২২০ দশমিক ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।

>> এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে ২৫ বছর পর্যন্ত টোল আদায় করবে ইতাল-থাই।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয় নির্মাণের জন্য ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ইতাল-থাইয়ের সঙ্গে প্রথম চুক্তি করে সেতু বিভাগ। সে বছর ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তি স্থাপন করেন।

তবে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় কাজ আটকে থাকে দুই বছর। নকশা পরিবর্তন ও মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হয়।

চুক্তি সংশোধনের পর ওই বছরই শুরু হয় ভূমি জরিপ। ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর এবং ২০১৫ সালের ১৬ অগাস্ট দুই দফা এ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

প্রকল্প পরিচালক ফেরদৌস বলেন, “ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা দিয়ে মূল অ্যালাইনমেন্ট যাওয়ার কারণে জমি অধিগ্রহণে সমস্যা হয়েছে। দুই-তিন বছর পিছিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের। তাছাড়া বিনিয়োগকারীর ফান্ডিং কনফার্ম হয় নাই। এ কারণেও সময় বেশি লেগেছে।”

তবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আশ্বাস দিয়েছে, আসছে ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পের অর্থের জোগান হয়ে যাবে। আর তা হলেই পুরোদমে কাজ শুরু করা যাবে বলে তিনি আশা করছেন।

সোমবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণকাজের জন্য আনা হয়েছে ভারী যন্ত্রপাতি। বিমানবন্দরের সামনে প্রি-কাস্ট ইয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে।

ওই ইয়ার্ডে এক্সপ্রেসওয়ের গার্ডার তৈরি করা হবে। পরে তা নিয়ে মূল কাঠামোর সঙ্গে জোড়া দেওয়া হবে।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাইয়ের কর্মকর্তারা জানান, এক্সপ্রেসওয়ের ২ নম্বর পায়ারের ওপর ক্রস বিম বসানোর জন্য স্টিলের কাঠামো তৈরির কাজ শেষ। মঙ্গলবার হবে কংক্রিট ঢালাই।

পরে ক্রস বিমের ওপর বসানো হবে গার্ডার। এভাবেই প্রকল্পের সুপার স্ট্রাকচার দৃশ্যমান হবে।

প্রকল্পের প্রথম অংশে বিমানবন্দর থেকে বনানী ওভারপাস পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটারের মধ্যে ২৩৩টি পায়ার বসবে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০টি পায়ার পুরোপুরি নির্মাণ হয়েছে, আংশিক শেষ হয়েছে ২৭টি।

ঘুরে দেখা গেছে, বনানী ওভারপাসের কাছে পাইলিংয়ের কাজ করছেন শ্রমিকরা। মাটির নিচে পাইলিং হয়ে গেলে ভিত্তি তৈরি করে উপরে দাঁড়াবে পায়ার।

প্রকল্পের দ্বিতীয় ভাগে বনানী থেকে তেজগাঁও অংশের অধিগ্রহণ করা জমি থেকে বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার কাজও চলছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সেখানে দ্বিতীয় ভাগের মূল কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন প্রকল্প পরিচালক।

তিনি জানান, প্রকল্পের তৃতীয় অংশের (মগবাজার থেকে কুতুবখালী) জমি অধিগ্রহণও শেষ হয়েছে। সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হবে আরও একবছর পর।

২০২০ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ আদৌ শেষ করা সম্ভব কিনা- এমন প্রশ্নে প্রকল্প পরিচালক বলেন, “সরকার আমাদেরকে ওই পর্যন্ত সময় দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।”