রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটা

প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে ভাটা পড়েছে; মাসের হিসেবে এবার সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিটেন্স এসেছে।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2017, 03:08 PM
Updated : 2 Oct 2017, 03:08 PM

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

এর আগে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৯২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেছেন, ঈদের পরের মাসে বরাবরই কম রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসীরা। সেপ্টেম্বর মাসে সেটাই হয়েছে।

সেপ্টেম্বরে কম হলেও জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স এসেছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৩৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কারণে বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটা পড়েছিল। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ রেমিটেন্স কম আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্স সংক্রান্ত হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।

এর মধ্যে প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছে ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। দ্বিতীয় মাস অগাস্টে ১৪১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার পাঠান প্রবাসীরা। সেপ্টেম্বরে পাঠিয়েছেন ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫.৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসে।

এরপর প্রতিবছরই রেমিটেন্স কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আড়াই শতাংশ কমে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে তা সাড়ে ১৪ শতাংশ কমে আসে ১ হাজার ২৭৭ কোটি ডলার, যা ছিল আগের ছয় অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

রেমিটেন্সের উৎস দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দা এবং মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্যান্য মাধ্যমে হুন্ডি প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈধপথে রেমিটেন্স কম আসছিল।

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রায় পুরো সময় ধরে পড়তির দিকে থাকা রেমিটেন্স চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) কিছুটা ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু সেপ্টেম্বরে ফের তা কমেছে।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিটেন্সের নিম্নগতি সরকারের নীতি-নির্ধারকদের কপালে ভাঁজ ফেলেছিল।

রেমিটেন্স বাড়াতে মাশুল না নেওয়াসহ নানা ঘোষণাও দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ  ডলার রেমিটেন্সের মধ্যে সরকারি ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ৮৫ লাখ ডলার।

৩৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৬২ কোটি ৬ লাখ ডলার। আর নয়টি বিদেশি ব্যাংকের মাধামে আসে ৯৫ লাখ ডলার।

বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখে প্রবাসীদের পাঠানো এই বৈদেশিক মুদ্রা।

রেমিটেন্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে টাকা পাঠানোকে দায়ী করছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি।

অন্যদিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের অর্থনীতির নাজুক অবস্থার কথা বলে আসছে আইএমএফ। সেখানে গিয়ে অনেকের বেকার হয়ে পড়ে থাকার খবরও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসছে।

দেশের রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ- সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে।