তিনি অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “অর্থমন্ত্রী সিলেটে বলেছেন, তিনি আবগারি প্রত্যাহার করবেন না। এখানে জেদ ধরার বিষয় নেই। আওয়ামী লীগ মানুষের রাজনীতি করে। মানুষের চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন। মানুষ এ শুল্ক চায় না। আওয়ামী লীগ ভোটের রাজনীতি করে, এটা মাথায় রাখা প্রয়োজন।”
অর্থমন্ত্রী গত ১ জুন ঘোষিত বাজেটে ব্যাংক গ্রাহকদের ওপর বাড়তি হারে আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করার পর থেকেই এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বছরের যে কোনো সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলে আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হবে।
পাশাপাশি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে ১৫ হাজার টাকার বদলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরাও আবগারি শুল্ক বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে করেছেন না। তারা বলছেন, শুল্ক বাড়লে লেনদেনের অবৈধ মাধ্যম উৎসাহিত হবে।
জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় কয়েকজন সাংসদও অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে অর্থমন্ত্রী নানামুখী আলোচনার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার সিলেটে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জানান, এই শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমানোর সুযোগ নেই।
সংসদে আব্দুল মান্নান বলেন, “অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক আগেও ছিল। এবার তা বাড়ানো হয়েছে। প্রায় সব সংসদ সদস্য বর্ধিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। সংসদের বাইরেও এটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
“আগে যে আবগারি শুল্ক ছিল তা ছিল। মানুষ মনে করছে, বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহার করা উচিত। এটি নিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। অনেকে ব্যাংকে খোঁজ নিচ্ছেন আসলে কত রাখলে কত ফেরত পাওয়া যাবে। বর্ধিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করে এই সংশয় দূর করতে হবে।”
সরকারি দলের এই সাংসদ খাতভিত্তিক ভ্যাট বাস্তবায়ন, কৃষি গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোরও দাবি জানান।
আওয়ামী লীগের আরেক সংসদ সদস্য একেএম আবদুল আউয়াল (সাইদুর রহমান) বলেন, “কৃষক, গ্রামের মহিলা এদের অ্যাকাউন্টে এখন এক লাখ টাকা থাকে। আমি যখন গ্রামে যাই তখন তারা বলে, তাদের অ্যাকাউন্টে এক-দুই লাখ টাকা আছে। এ অবস্থায় আবগারি শুল্ক বসালে প্রতিক্রিয়া হবে। নির্বাচনের পূর্বে... এটা প্রত্যাহার করা উচিত। যেটাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটা রাখার যুক্তি নেই।”
তবে চাঁদপুরের সংসদ সদস্য শামসুল হক ভুইয়া আবগারি শুল্কে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “ব্যাংকে টাকা রাখে কারা? অনেকেই আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। আমি এই শুল্ক সমর্থন করি। এটি অবাস্তব নয়। এটি করলে অকল্যাণ হবে না।”
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম রুহুল হক বলেন, “শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে চিকিৎসকদের হাতকড়া পরিয়ে নেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এটি নিয়ে বিশেষ চিন্তা করা প্রয়োজন।”
তিনি বিজ্ঞানখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সানজিদা খানম ই-কমার্স ও মেডিটেশন থেকে কর প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আব্দুল মুনিম চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষ মনে করে বাজেট মানে কর বৃদ্ধি, দাম বৃদ্ধি। এত ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপের পরও প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির ৫ শতাংশ ঘাটতি।
তিনি শিশু খাদ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক না বাড়ানো, আমানতে আবগারি শুল্ক না বাড়ানো এবং সঞ্চয় পত্রে সুদের হার না কমানোর দাবি জানান।