৮ কোটি ডলারের প্রকল্প থেকে সরল আইডিবি

বিদ‌্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প থেকে সরে গেছে ইসলামী উন্নয়ন ব‌্যাংক, যাতে তাদের আট কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল।

জাফর আহমেদ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2017, 07:06 PM
Updated : 13 Feb 2017, 07:47 PM

দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরে যেতে চাইছে মধ‌্যপ্রাচ‌্যভিত্তিক অর্থলগ্নিকারী সংস্থাটি। অন‌্যদিকে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, পছন্দের কোম্পানিকে কাজ না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়েছে আইডিবি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) ‘সিলেট পাওয়ার ইফিসিয়েন্ট ইম্প্রোভমেন্ট’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায় গ‌্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সক্ষমতা ৭৫ মেগাওয়াট বাড়ানো হবে।

আইডিবি অর্থায়ন সরিয়ে নিলে বিউবোর নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থের জোগান দিয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে কাজটি করা হবে বলে প্রকল্প পরিচালক এম এম সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের জন্য আইডিবির সঙ্গে সরকারের চুক্তি সই হয়েছিল।

সম্প্রতি আইডিবি ঋণ প্রত‌্যাহারের কথা জানিয়ে একটি চিঠি দেয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি)। তাতে অভিযোগ করা হয়, সব দরদাতাকে সমান সুযোগ না দেওয়ায় দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

ইআরডি এখন ঋণ বাতিল প্রক্রিয়া অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বলে ইআরডির একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

প্রকল্প পরিচালক সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত বছর দরপত্র আহ্বান করে ১২/১৩টি কোম্পানিকে প্রাথমিকভাবে বাচাই করা হয়। এর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে সাংহাই ইলেক্ট্রনিক্স কর্পোরেশন। আর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে শ্রীলঙ্কাভিত্তিক কোম্পানি লাকধানাভি লিমিটেড।

তিনি জানান, সাংহাই ইলেক্ট্রনিক্স প্রতিকিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় চেয়েছে ৮০ হাজার ৫০০ টাকা দরে। আর লাকধানাভি চায় ৮৫ হাজার ৩০০ টাকা।

“সুতরাং চুক্তি ও পিপিআর অনুযায়ী আমরা সাংহাই ইলেক্ট্রনিক্স কর্পোরেশনকে চূড়ান্ত বাছাই করি,” বলেন সিদ্দিক।

তিনি বলেন, “লাকধানাভি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া সত্ত্বেও ওই কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার জন্য আমাদের অনুরোধ জানায় আইডিবি। কিন্তু আমরা আমাদের আইন লঙ্ঘন থেকে বিরত থাকা ও অতিরিক্ত ব্যয় এড়াতে আমরা সর্বনিম্ন দরদাতাকেই কাজ দেওয়ার পক্ষে।”

ইসলামী উন্নয়ন ব‌্যাংক

ইআরডির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইডিবি অভিযোগ করেছে, বিউবো কর্তৃক মূল্যায়িত সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন কিছু কারিগরি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে, যা অনুমোদিত টেন্ডার ডকুমেন্টে উল্লেখ করা হয়নি।

“তারা বলেছে, সব দরদাতাকে সমান সুযোগ না দেওয়ায় বিউবো কর্তৃক সম্পন্ন কারিগরি মূ্ল্যায়ন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ। তাই দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাচাই করার অনুরোধ করে আইডিবি।”

তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে ইআরডি বলেছে, আইডিবির অনুমোদন নিয়েই দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। অনুমোদিত কারিগরি তথ্যের ভিত্তিতেই দরপ্রস্তাবগুলো মূল্যায়ন করা হয় এবং সাংহাই ইলেক্ট্রনিক্সকে বাছাই করে।

ইআরডির অতিরিক্ত সচিব শামসুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইডিবির অনমনীয় মনোভাবের কারণেই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে বাধ্য হয়ে এখন চুক্তিটি বাতিল করতে হচ্ছে।

“চুক্তি বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য আমরা ইতোমধ্যেই একটি অনুমতিপত্র পাঠিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।”

“এখন আমরা আইডিবিকে মৌখিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছি, এ প্রকল্পটি থেকে ঋণ প্রত্যাহারের পর এ খাতের অন্য কোনো প্রকল্পে বা অন্য খাতের যে কোনো প্রকল্পে যেন তারা এই ঋণটি দেয়। তারা আমাদের এ বিষয়ে প্রাথমিক কথা দিয়েছে,” বলেন অতিরিক্ত সচিব।