বেসিক ব্যাংক টিকিয়ে রাখতে বন্ড ছাড়বে সরকার

ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত বেসিক ব্যাংককে টিকিয়ে রাখতে বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2016, 02:46 PM
Updated : 27 Dec 2016, 02:46 PM

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, “ব্যাংকটি আর্থিকভাবে দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। এটাকে যখন রেখেছি, টিকিয়ে রাখতে হবে। আর সেজন্যই বন্ড ইস্যু করা হবে।”

দুর্দশাগ্রস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব‌্যাংকটি নিয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন তিনি।

তবে কী পরিমাণ বন্ডের মাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটানো হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান মন্ত্রী।

“ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির জন্য কিছু করতে হবে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি ব্যাংকটিকে বন্ড দেব। তবে কতটা দেব, এখনও ঠিক করা হয়নি।”

ঋণ কেলেঙ্কারির পর থেকেই মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। এই ঘাটতি পূরণে গত আগস্ট মাসে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সুদমুক্ত বন্ড চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠায় বেসিক ব্যাংক। মোট ২৬টি বন্ডের মাধ্যমে এই অর্থ দেওয়ার আবেদন করা হয়।

আর্থিক সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ‌্যেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বন্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ।

তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাংকটিকে ভালোভাবে পরিচালনার জন্যই আমরা ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বন্ড চেয়েছি।”

বেসিক ব্যাংক একটি লাভজনক ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে আবদুল হাই বাচ্চুকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার পর থেকেই এ ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হতে থাকে।

অভিযোগ রয়েছে, বাচ্চুর সময়কালে (২০০৯-১৪) প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব‌্যাংকটি থেকে।

চাপের মুখে থাকা বাচ্চু ২০১৪ সালে পদত্যাগ করেন। তখন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, পদত্যাগ করলেই পার পাবেন না বাচ্চু। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত জুন পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকেরও বেশি।

এরপর মূলধন ঘাটতি পূরণে ব্যাংকটিকে কয়েক দফায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার।

ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি বর্তমানে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এই ঘাটতিই ব্যাংকটি বন্ডের মাধ্যমে পূরণ করতে চায়।

আবেদনে বেসিক ব্যাংক বলেছে, বন্ড হতে পারে ২৬টি এবং প্রতিটি বন্ডের মূল্যমান হতে পারে ১০০ কোটি টাকা।

তবে বেসিক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, গত আগস্টে বেসিক ব্যাংকের পর্ষদে তিনটি বন্ডের প্রস্তাব করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকার একটি এবং ৮০০ কোটি টাকার সমমূল্যের দুটি বন্ড।
আলাউদ্দিন মজিদ বলেন, “আমাদের এখন নগদ টাকার দরকার নেই। মূলধন ঘাটতি থাকায় আমরা এখন ব্যবসা করতে পারছি না। সরকার শুধু কাগজের বন্ড দিলে আমরাও খাতাপত্রে দেখাতে পারব যে আমাদের মূলধন ঘাটতি নেই। তখন ব্যবসা করতে পারব।”

ব্যাংকটিকে আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া ‘সময়ের ব্যাপার’ মন্তব‌্য করে তিনি বলেন, “জ্বালানি তেল কেনার জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) সরকার আগে যেমন গ্যারান্টি দিত, বেসিক ব্যাংককে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বন্ড দেওয়ার বিষয়টিও সে রকম হতে পারে।”