ব্যাংকে বিতরণের আগেই ফুটপাতে চকচকে নোট

ফুটপাতে নতুন নোট কীভাবে আসে, সে প্রশ্ন নতুন নয়। কিন্তু কখনও এর কোনো জবাব পাওয়া যায় না। এবারও যাচ্ছে না।

শেখ আবু তালেববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2024, 05:37 PM
Updated : 28 March 2024, 05:37 PM

রোজার ঈদ উপলক্ষে এবার সরকারি-বেসরকারি ৮০টি ব্যাংক শাখার মাধ্যমে নতুন টাকার নোট বাজারে ছাড়বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গেলে এবার নতুন নোট মিলবে না।

এদিকে ব্যাংক থেকে নতুন নোট বিতরণের এক সপ্তাহ আগে থেকেই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চকচকে নোটের পসরা নিয়ে ফুটপাতে বসে গেছেন; দামও হাঁকছেন গতবারের তুলনায় বেশি।

গত ২০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ৩১ মার্চ থেকে নতুন টাকা পাওয়া যাবে ব্যাংকের শাখায়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণার পরের দিন থেকেই কোনো কোনো ব্যবসায়ীর কাছে পাওয়া যাচ্ছে নতুন টাকার নোট।

মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সেনা কল্যাণ ভবনের সামনের ফুটপাতে নতুন টাকা নিতে এসেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে নাইমুল ইসলাম।

দরদাম করে দুটি দশ টাকার নতুন নোটের বান্ডেল (প্রতিটিতে ১০০টি নোট) নিতে বিক্রেতাকে অতিরিক্ত ৩০০ টাকা দিলেন তিনি।

কয়েক দিন পর ব্যাংকেই তো পাওয়া যেত নতুন নোট। তাহলে ফুটপাত থেকে নিচ্ছেন কেন জানতে চাইলে নাইমুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার আগেই বাড়ি যাব। ঈদের সময়ে নতুন টাকা নিতে বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। বেশি টাকা দিয়ে কিনতেই যখন হবে, আগেই কিনে নিলাম। লাগলে পড়ে আরো কিনব।”

ফুটপাতে নতুন নোট কীভাবে আসে, সে প্রশ্ন নতুন নয়। কিন্তু কখনও এর কোনো জবাব পাওয়া যায় না। এবারও যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‍মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিবা মাত্র টাকা বদলে দেয়। সেই টাকা দিয়ে কোন ব্যক্তি কি করল, তা দেখার বিষয় আমাদের না।”

কিছু ব্যবসায়ীর কাছে সারাবছরই পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন নোট পাওয়া যায়, সেটা কীভাবে তারা পায়– এমন প্রশ্নের উত্তরে কোনো মন্তব্য করতে চাননি মুখপাত্র।

ব্যাংক যেহেতু এখনও নতুন নোট ছাড়েনি, সে কারণে ফুটপাতের দোকানিদের বেশি দাম নেওয়ার সুযোগ বেড়েছে। গতবারও ব্যাংক চাহিদার তুলনায় কম নতুন নোট ছাড়ায় ব্যবসায়ীরা প্রতি বান্ডেলে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে বেশি নিয়েছিলেন।

গুলিস্তানের ফুটপাতে সারা বছরই নতুন টাকা বদলে দেওয়ার ব্যবসা করেন হাসানুজ্জামান শান্ত। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গত ঈদের পর থেকে ১০ টাকার নোটের বান্ডেল একশ টাকার নিচে বিক্রি করিনি। আমরা ৮০ টাকায় কিনে আনি। এবার বাজার কেমন যাবে জানি না।’’

তাদের ঠিক করা নির্দিষ্ট লোকের পাশাপাশি অনেকেই গুলিস্তানে এসে তাদের কাছে নতুন টাকার নোট দিয়ে যায় বলে জানালেন এই বিক্রেতা।

ফুটপাতে ১০ ও ২০ টাকার নতুন নোটের প্রতি বান্ডেলে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ১৫০ টাকা। ৫ টাকার নতুন নোটের বান্ডিলেও (বান্ডেলে ১০০ নোট) বেশি দিতে হচ্ছে ১৫০ টাকা। ২০ টাকার নোটের এক বান্ডেলে অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ২০০ টাকা।

অথচ বাংলাদেশের আইনে এভাবে মুদ্রা বিক্রি অপরাধ। বাংলাদেশের অনুমোদিত মুদ্রার বিনিময় করতে অতিরিক্ত কোনো ফি, চার্জ বা অর্থ নেওয়া দণ্ডনীয়। তবে ফুটপাতের এসব দোকানিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির মেলে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ছাড়াও রাজধানীর গুলিস্তান, সদরঘাট, মিরপুর, ফার্মগেইট, রায়সাহেব বাজার এলাকায় নতুন নোটের পসরা বসিয়ে থাকেন নিয়মিত ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

ব্যাংক থেকে নতুন নোট

গতবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৪০টি শাখার মাধ্যমে নতুন টাকার নোট বিতরণ করা হয়েছিল। এবার সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।

আগামী ৩১ মার্চ থেকে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, সাভার, গাজিপুর, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার নির্ধারিত ব্যাংক শাখা থেকে নতুন নোট নেওয়া যাবে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া এসব শাখা থেকে ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নতুন নোট সংগ্রহ করা যাবে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। অর্থাৎ, আট দিন এসব শাখা থেকে নতুন নোট নিতে পারবেন গ্রাহকরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একজন গ্রাহক মোট সাড়ে ১৮ হাজার টাকার নতুন নোট নিতে পারবেন পুরনো টাকা দিয়ে। প্রতিটি শাখাকে দৈনিক কমপক্ষে ৯০ জনকে নতুন টাকা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ হিসাবে একটি শাখা দৈনিক কমপক্ষে ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকার নতুন নোট বিতরণ করবে। আর একদিনে ৮০টি শাখার মাধ্যমে বিতরণ হবে ১৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার নতুন নোট। এভাবে আট দিনে নতুন নোট ছাড়া হবে ১০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার।

সাধারণত বছরে দুই ঈদে নতুন টাকার নোট ছাড়া হয়। আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে পারেন গ্রাহকরা।

গতবার এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ হাজার টাকার নতুন নোট সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। ১৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়তে পাঁচটি কাউন্টার খুলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

ঝামেলা ছাড়া নতুন নোট সংগ্রহে অনেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান শাখায় যেতেন। কিন্তু এবার সে সুযোগ বন্ধ।

এর কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক কেপিআই (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) ভুক্ত হওয়ায় অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাধারণের প্রবেশ সংকোচন করা হয়েছে। এ কারণে নতুন টাকা বিতরণ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।” 

যেসব শাখায় মিলবে নতুন নোট