উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির পর্ষদ সভায় দুই প্রকল্পের আওতায় এ ঋণ অনুমোদ দেওয়া হয়েছে।
Published : 22 Jun 2024, 08:12 PM
বাজেট সহায়তা হিসেবে ৫০ কোটি ডলারের পাশাপাশি বাংলাদেশকে আরেকটি প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক।
উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির পর্ষদ সভায় গত শুক্রবার মোট ৯০ কোটি ডলারের এ ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। শনিবার সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বাজেট সহায়তায় এ ঋণ বাংলাদেশের রাজস্ব ও আর্থিক খাতে নীতি আরও শক্তিশালী করার কর্মসূচি এগিয়ে নিতে ব্যয় হবে।
অপরদিকে পর্ষদের অনুমোদন পাওয়া ৪০ কোটি ডলার ঋণ প্রকল্পের আওতায় শহরের অবকাঠামো এবং এর ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন করা হবে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাটিয়ে টেকসই প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
‘সেকেন্ড রিকভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ এর আওতায় এবারের বাজেট সহায়তার ৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়া যাবে। এটি বাজেট সহায়তায় দ্বিতীয় কিস্তি। এর আগে প্রথম কিস্তিতে বিশ্ব ব্যাংক দিয়েছিল ২৫ কোটি ডলার।
এ ঋণ অনুমোদনের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে রাজস্ব ও আর্থিক খাতের সংস্কার এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ ভবিষ্যতের অন্যান্ন ধাক্কা মোকাবিলায় সহনশীলতা তৈরি করতে সহায়তা করবে।
এ বিষয়ে বংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, নতুন এ অর্থায়ন বাংলাদেশের আর্থিক খাত ও নগর ব্যবস্থাপনার মত গুরুত্বপূর্ণ দুই খাতে সাহায্য করবে, যা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্তমূলক জরুরি সংস্কার বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও অন্যান্য আঘাতের প্রতি সহনশীলতা জোরদার করতে সাহায্য করবে।
‘সেকেন্ড রিকভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ প্রকল্পের আওতায় বাণিজ্য কর থেকে ভোগ ও আয়করভিত্তিক রাজস্ব ব্যবস্থায় রূপান্তর হতে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে। এটি বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান আরও জোরদার করবে এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত হতে সহায়তা করবে।
এতে বলা হয়েছে, বিশ্ব ব্যাংকের এ অর্থায়ন ইলেকট্রনিক সরকারি ক্রয় (ই-জিপি সিস্টেম) পদ্ধতির জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট কর্তৃপক্ষকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করবে। এতে ই-জিপি সংগ্রহের গড় সময় ৭০ দিন থেকে ৫৫ দিনে নেমে আসবে।
এটি ব্যাংকিং খাতে তত্ত্বাবধান বাড়াতে ও সঞ্চয়পত্রের মত বিনিয়োগ খাতের ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করতে সহায়তা করবে। এছাড়া নগদভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং সরকারি ও বেসরকারি জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করবে।
আর্থিক খাতের প্রকল্পের বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট ও প্রোগ্রামের টাস্ক টিম লিডার বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে এবং আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়াদের জন্য অর্থায়ন প্রাপ্তির সুযোগ আরও উন্নত করতে কার্যকরী আর্থিক খাত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, সরকার বাহ্যিক ভারসাম্যহীনতা মোকাবেলায় শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংস্কার হাতে নিয়েছে। আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করার জন্য একটি নতুন আইনি কাঠামোও গ্রহণ করেছে।
এ প্রকল্পের অর্থায়ন মূলধন সংকটে থাকা ব্যাংকের সংকট দ্রুত মোকাবেলার কর্মকাঠামো বাস্তবায়নে সাহায্য করবে। অর্থনৈতিক মন্দা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের রক্ষা করতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিকেও আরও শক্তিশালী করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
শহরের অবকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্পটি দক্ষিণের জেলা কক্সবাজার থেকে উত্তরের পঞ্চগড় পর্যন্ত মহাসড়কের ৯৫০ কিলোমিটারের বেশি জুড়ে অর্থনৈতিক করিডোর বরাবর সাতটি শহরের ক্লাস্টারে জলবায়ু-সহনশীল ও লিঙ্গীয়-প্রতিক্রিয়াশীল শহুরে অবকাঠামো এবং নগর ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৩৮ শতাংশ শহরাঞ্চলে বাস করত। ২০৫০ সালের মধ্যে শতাংশের হার ৬০ এ গিয়ে ঠেকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এর বেশি প্রভাব পড়ছে রাজধানী ঢাকায়। ঢাকার মত শহর বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলির একটিতে পরিণত হয়েছে।
এ প্রকল্পের অর্থায়নের মাধ্যমে অন্য বড় শহরগুলোতে জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন হলে তা ঢাকার যানজট কমাতে সাহায্য করবে এবং ঢাকার পরিবর্তে সেসব শহরে জলবায়ু অভিবাসীদের যেতে সাহায্য করবে।
বিশ্ব ব্যাংক মনে করছে প্রকল্পটি কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ করিডোর ও সিটি ক্লাস্টারগুলির উন্নয়নে সহায়তা করতে বিনিয়োগ আনতে সহায়তা করবে। এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে, গ্রামীণ-শহুরে সংযোগ এবং রূপান্তর বাড়াতে, খাদ্য সরবরাহের চেইনকে শক্তিশালী করতে এবং দেশি বাজার ও বৈশ্বিক মূল্যের সঙ্গে সংযোগে সহায়তা করবে।
এ অর্থায়ন রাস্তা ও বাস টার্মিনালের উন্নতির মাধ্যমে নির্বাচিত শহর এবং আশেপাশের ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে সংযোগ উন্নয়নে সাহায্য করবে ও পর্যটন, খোলা জায়গা এবং অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে নতুন নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াবে।