মে মাসে এক যুগের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি

এর আগে ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে এর চেয়ে বেশি ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2023, 03:03 PM
Updated : 5 June 2023, 03:03 PM

মূল্যস্ফীতি নিয়ে আলোচনা আর আশঙ্কার মধ্যেই অর্থনীতির এ গুরুত্বপূর্ণ সূচক পৌঁছে গেছে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সোমবার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে মে মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে, যা এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

এর মানে হল, গত বছরের মে মাসে দেশে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, সেই পণ্য বা সেবা পেতে এ বছর মে মাসে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সা ব্যয় করতে হয়েছে।

এর আগে ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে এর চেয়ে বেশি ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। তারপর আর কখনও এই হার ১০ শতাংশ ছাড়ায়নি।

মে মাসের মূল্যস্ফীতির এই হার গত বছরের মে মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। গত বছরের মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্য ও মজুরি উইংয়ের পরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তথ্য বিশ্লেষণে আমরা দেখেছি, খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত উভয় খাতেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বিশেষ করে আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে বেশি মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে।”

পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত উভয় খাতেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। খাদ্য উপখাতে (পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে) মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে হয়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

আগের মাস এপ্রিলে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য উপখাতে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল।

Also Read: মূল্যস্ফীতি যেন ১০% না হয়, স্রষ্টার কাছে মন্ত্রীর প্রার্থনা

Also Read: অগাস্ট-সেপ্টেম্বর দু’মাসেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি

Also Read: মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার কঠিন লক্ষ্য বাজেটে

বিবিএস বলছে, মে মাসে গ্রামীণ এলাকার চেয়ে শহর এলাকায় মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি ছিল। গ্রামে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে, এর মধ্যে খাদ্য উপখাতে হয়েছে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ, খাদ্য বর্হিভূত উপখাতে হয়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

অন্যদিকে শহরাঞ্চলে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য উপখাতে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে।

বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতি ও ডলারের ব্যাপক মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের বাজারে সবধরনের পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাওয়ায় গত বছর থেকেই মূল্যস্ফীতি বাড়ছিল। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির জেরে গত অগাস্টে মূল্যস্ফীতি পৌঁছে যায় এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে।

সেখান থেকে গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত টানা পাঁচ মাস মূল্যস্ফীতির হার ক্রমান্বয়ে কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। এর পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে উন্নীত হয়। পরের মাস মার্চে তা আবারও ৯ শতাংশের ঘর ছাড়িয়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়।

এপ্রিল মাস তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এলেও গত মাসে আবারও মূল্যস্ফীতির হার উর্ধমুখী হয়ে ১০ শতাংশ ছুঁই ছুই করছে।

চলতি বছর ১৮ জানুয়ারি সরকারের নির্বাহী আদেশে শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। এরপর ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তিন দফা, প্রতিবার গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ে গড়ে ৫ শতাংশ করে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে পণ্যমূল্যে। 

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরা হলেও সরকার তাতে ব্যর্থ হয়েছে। তারপরও আগামী অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যার কোনো যৌক্তিকতা দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা। 

তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আশাবাদী। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, “বিশ্ব বাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা করি।”