সেপ্টেম্বরের পর এডিবির পর্ষদ সভায় বিষয়টি অনুমোদনের জন্য উঠতে পারে।
Published : 25 Jun 2024, 12:36 AM
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।
কর্মকর্তারা বলছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণ সামনে রেখে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী করতে এই সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তাতে রিজার্ভের চাপ কমবে বলে সরকার আশা করছে।
আগামী ৭ জুলাই এডিবির পরবর্তী মিশন আসার কথা রয়েছে। তখন আলোচনা চূড়ান্ত হলে সেপ্টেম্বরের পর এডিবির পর্ষদ সভায় বিষয়টি অনুমোদনের জন্য উঠতে পারে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিয়াউল আবেদীন।
এই বাজেট সহায়তার জন্য এডিবির যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তার নিরিখে নীতি কার্যপ্রণালী কী হবে তা চূড়ান্ত করতে জিয়াউল আবেদীনকে সভাপতি করে ১২ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রথম সভা হয়েছে রোববার।
এডিবি সদরদপ্তরের দুজন প্রতিনিধিসহ অর্থ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিরা ওই সভায় অংশ নেন।
জিয়াউল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০২৬-এ এলডিসি থেকে উত্তরণে আমাদের রাজস্ব ও আর্থিক খাতে কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন তা এডিবির সাথে আলোচনা করে আমরা ঠিক করব এবং সে অনুযায়ী সকল দপ্তর বাস্তবায়ন করব।”
তিনি বলেন, এ বাজেট সহায়তার আওতায় যেসব প্রকল্প নেওয়া হবে, তাতে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া করব্যবস্থার অটোমেশন, কর ফাঁকি রোধের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কাস্টমস আইনের দ্রুত ইংরেজিকরণসহ বেসরকারি খাতের উন্নয়নের জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরির বিষয়গুলোও অগ্রাধিকারে থাকবে বলে জানান এই অতিরিক্ত সচিব।
অর্থ বিভাগ থেকে তৈরি সভার নথিতে দেখা যায়, দুটি সাব প্রোগ্রামের অধীনে ৪০০ মিলিয়ন ডলার করে সর্বমোট ৮০০ মিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে এডিবির কাছে। এ প্রোগ্রামের অধীন এনবিআরকে ২০২৭ সালের মধ্যে কর-জিডিপি অনুপাত ২ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯.৪ করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবেদীন বলেন, “আমরা প্রাথমিক আলোচনা চালাচ্ছি। আশা করি, সেপ্টেম্বরের মাঝে সকল আলোচনা শেষ হবে। আমাদের কী কী করতে হবে সেটিও চূড়ান্ত হয়ে যাবে। তবে, সেটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ও বিশ্ব ব্যাংকের অন্যান্য সহায়তার অধীনের লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঠিক করা হবে, যাতে লক্ষমাত্রা অর্জনে বেগ পেতে না হয়।
“দুটি নাকি আরও বেশি সাব-প্রোগ্রামে এই অর্থ আসবে তখনই জানা যাবে।”
আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ০.৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানোর শর্তে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ।
পরের দুই অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যথাক্রমে ০.৫ শতাংশ পয়েন্ট এবং ০.৭ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে সেখানে।
এডিবির কাছে বাজেট সহায়তা চাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ২ মার্চ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এই সহায়তা মিলতে পারে।
সে সময় এডিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট (সেক্টর ও থিমস) ফাতিমা ইয়াসমিনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলার কথা স্বীকার করলেও অর্থের পরিমাণ নিয়ে কিছু বলেননি।
এর আগে এডিবির কাছ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পাওয়ার জন্য একটি চুক্তি করে বাংলাদেশ। সেই অর্থ সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করতে খরচ হবে।
এডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশকে গড়ে ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিচ্ছে তারা। এর মাঝে বাজেট সহায়তাও রয়েছে।
এ পর্যন্ত এডিবি বাংলাদেশকে ৭২৬টি সরকারি খাতে ঋণ, অনুদান ও কারিগরি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার পরিমাণ ৩১.৮ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবির সার্বভৌম পোর্টফোলিওতে ৭৫টি ঋণ এবং চারটি অনুদান প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পে অর্থের পরিমাণ ১৩ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের পাশাপাশি বাংলাদেশকে আরেকটি প্রকল্পে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।
উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির পর্ষদ সভায় গত শুক্রবার মোট ৯০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। বাজেট সহায়তায় এ ঋণ বাংলাদেশের রাজস্ব ও আর্থিক খাতের সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নিতে ব্যয় হবে।