ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
শুক্রবার সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৭ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত শিক্ষার্থী যৌন নিপীড়নের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে- যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান চর্চা ও জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা। নিরাপদ ও ভয়হীন পরিবেশ জ্ঞান চর্চার পূর্বশর্ত।
“এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় চট্টগ্রাম শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করছে।”
রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হতাশার মোড় থেকে হলে ফেরার পথে এক ছাত্রী ও তার বন্ধুকে আটকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে যৌন নিপীড়ন করে পাঁচজন। ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ।
এ ঘটনায় দোষীদের বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাস যখন উত্তাল, তখন ‘বর্ষাবরণ’র সাংস্কৃতিক আয়োজন ও ফলাহার করে সমালোচনার জন্ম দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
যদিও শুক্রবার বিবৃতিতে সংগঠনটি বলছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্ভূত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।
“সমিতি বিশ্বাস করে, এই ব্যাপারে প্রশাসন যথেষ্ট সক্ষম ও আন্তরিক এবং আশা করি, অতি অল্প সময়ে অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবে। এই ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো প্রকার গাফিলতি ও ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা শিক্ষক সমাজ মেনে নেবে না।”
এ ধরনের অপরাধ নির্মূলে শিক্ষক সমিতি আইন প্রয়োগের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ‘অধিকহারে’ মুক্তবুদ্ধির চর্চা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও সুষ্ঠু বিনোদনের প্রতি গুরুত্বারোপ করছে।
“এই ব্যাপারে শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নে যেকোনো প্রকার সহযোগিতার হাত বাড়াতে প্রস্তুত রয়েছে।”
নিপীড়নের ঘটনার পরদিন সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের বাধায় তা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর এক বন্ধু।
তবে রেজাউল হক রুবেলের দাবি, তিনি ওই ছাত্রীকে অভিযোগ দিতে বাধা নয়, বরং সহযোগিতা করেছেন।
ইতিমধ্যে রুবেলকে ‘শৃঙ্খলা পরিপন্থী’ কাজ করায় শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সেই নোটিস পেয়ে বুধবার ঢাকায় যান রুবেল।
যৌন নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রী মঙ্গলবার থানায় মামলা করেন, তাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। সেদিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেন। শুক্রবার ওই ঘটনায় নিপীড়নকারী দুই শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ।