চট্টগ্রামে মাদ্রাসার টয়লেটে শিশুর ঝুলন্ত লাশ

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলছে, টয়লেটে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে ছেলেটি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2023, 02:21 PM
Updated : 14 March 2023, 02:21 PM

চট্টগ্রাম শহরেরর একটি মাদ্রাসার টয়লেট থেকে ১১ বছরের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

চকবাজার থানার মেহেদীবাগ এলাকার ‘দারুস সুফফাহ তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসা’ কর্তৃপক্ষ বলছে, সোমবার রাতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে ছেলেটি।

তবে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা বলছেন, “প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা মনে হলেও মূল কারণ জানতে আমরা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত অপেক্ষা করব।”

সাবিব সাইয়ান নামের শিশুটি দামপাড়া পল্টন রোডের মশিউর রহমান চৌধুরীর ছেলে। তাদের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায়।

মশিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার ছেলে ওই মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টায় তাকে তিনি মাদ্রাসায় দিয়ে আসতেন এবং রাত ৯টার দিকে বাসায় ফিরিয়ে আনতেন। 

“প্রতিদিন ছুটির পর মাদ্রাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকত সাবিব। আমি গেলে নিচে নেমে আসত। গতকাল মাদ্রাসার ভবনের সামনে গিয়েও তাকে না দেখে নিচ থেকে ডাকাডাকি করি। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে এক হুজুরকে ফোন করি। তিনি তখন বলে ছুটি তো হয়ে গেছে।

“এসময় দুই ছাত্র নিচে এসে আমাকে জানায়, সাবিব ‘আত্মহত্যা’ করেছে। আমি যেন দ্রুত উপরে উঠি। আমি আর মাদ্রাসার শিক্ষকরা মিলে ওকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে চিকিৎসক ওকে মৃত ঘোষণা করেন।”

সাবিব কখন কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল কি না, কিংবা মাদ্রাসায় যেতে আপত্তি করত কি না জানতে চাইলে মশিউর বলেন, ২০২০ সালের শেষ দিকে তার ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়।

“প্রতিদিন সকালে স্বাভাবিকভাবেই সে আমার সাথে মাদ্রাসায় যেত। কখনও মারধর কিংবা অন্যকিছুর বিষয়ে অভিযোগ করেনি।”

চকবাজার থানার ওসি মনজুর কাদের চৌধুরী বলেন, শিশুটির বাবা ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা সাবিবকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে।

“শিক্ষকরা বলেছেন, সে কোমরের বেল্ট দিয়ে বাথরুমের হ্যাঙ্গারে ফাঁস দিয়েছিল নিজে। প্রাথমিকভাবে শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা বলেন, “মাদ্রাসার ক্লাস রুমে সিসি ক্যামেরা ছিল। কর্তৃপক্ষ সেগুলো আমাদের দিয়েছে। সেখানে দেখা গেছে শিশুটি ৯টার আগে নিজে বাথরুমে প্রবেশ করে। বেশ কিছুক্ষণ পর দরজা ভেঙে তাকে বের করা হয়।”

মাদ্রসার পরিচালক হাফেজ মো. ফোরকান মনসুর জানান, রাত ৯টায় ছুটি দেওয়ার পর সাবিব বাথরুমে যায়। আর তিনি নিজের কক্ষে চলে যান। ওই সময় সাবিবের বাবা ফোন করেন। বাথরুম থেকে বের হতে দেরি করায় অন্য ছাত্ররা বাথরুমের দরজা ধাক্কাধাক্কি করে।

“আমাদের অন্য এক জন শিক্ষক বাইরে থেকে মাদ্রাসায় এসেছিলেন, তিনি দরজা ভেঙে বাথরুমের হ্যাঙ্গারের সাথে বেল্ট দিয়ে সাবিবকে ঝুলন্ত দেখেন। পরে তার বাবাসহ আমরা সাবিবকে প্রথমে ম্যাক্স হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।”

পরিচালক ফোরকান জানান, ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর তিনি ঘর ভাড়া নিয়ে মাদ্রাসাটি চালু করেন। তার পাঁচদিন পর ২৬ তারিখে সাবিব মাদ্রাসায় ভর্তি হয়।