মাকে খুন করে ঢাকায় পালানোর পথে বাস থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রয়াত নেতা শামসুল আলম মাস্টারের ছেলে মাঈনুল ইসলাম।
বোনের করা মামলায় নগরীর শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বুধবার মাঈনুল ওরফে মাঈনুকে (২৯) র্যাব গ্রেপ্তার করে।
মঙ্গলবার দুপুরে পটিয়ায় ৬০ বছর বয়সী মা জেসমিন আক্তারকে তার নিজের ঘরে গুলি করে হত্যা করেন মাঈনু। এরপর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, পারিবারিক কলহ ও টাকাপয়সা নিয়ে বিরোধের জেরে মাঈনু তার মাকে খুন করে বসেন।
র্যাব অধিনায়ক ইউসুফের ভাষ্য, “মাকে খুন করার পরও মাঈনুদ্দীনের মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, খুন করার পর মাঈনু নিজেকে বাঁচাতে প্রথমে মোবাইল ফোনটি কোথাও ফেলে দেন। তারপর পরিচিত এক ‘বড় ভাইয়ের’ মাধ্যমে সাতকানিয়ায় একটি কারখানায় আত্মগোপন করেন।
ঢাকায় পালানোর জন্য বুধবার বিকালে সাতকানিয়ার কেরানীহাট থেকে একটি বাসে ওঠেন মাঈনু। বাসের টিকেট না পেলেও সুপারভাইজারকে টাকা দিয়ে তিনি ঢাকায় রওনা হন। শাহ আমানত সেতু এলাকায় ওই বাস থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব-৭ অধিনায়ক ইউসুফ বলেন, “মাঈনু উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির হওয়ায় প্রয়াত শামসুল আলম মাস্টার তার সম্পত্তি ছেলেকে না দিয়ে স্ত্রী ও মেয়ের নামে দিয়ে গেছেন। গত ১৩ জুলাই শাসমুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর এ নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়।“
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাদে মাঈনু র্যাবকে বলেছেন, ঘটনার দিন সকালে মেয়েকে নিয়ে ব্যাংকে গিয়েছিলেন জেসমিন। সেটা জানার পর মাঈনুর ধারণা হয়, তাকে বাদ দিয়ে তার মা ও বোন ব্যাংক থেকে টাকা তুলছেন এবং সম্পত্তি বিক্রি করে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাচ্ছেন।
“এরপর দুপুরে মাঈনু তার ঘরে গিয়ে মা ও বোনের সঙ্গে ঝগড়া বাঁধায়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পিস্তল বের করে বোনের দিকে গুলো ছোঁড়েন। সেটা তার শরীরে না লাগায় মাকে গুলি করে বসেন মাঈনু,” বলেন র্যাব কর্মকর্তা ইউসুফ।
ওই ঘটনায় জেসমিন আক্তারের মেয়ে বাদী হয়ে তার ভাই মাঈনুকে আসামি করে পটিয়া থানায় একটি মামলা করেন।
র্যাব জানায়, প্রয়াত শামসুল আলম মাস্টারের মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন।এর আগে ২০১৭ সালে ‘শোধরানোর’ জন্য মাঈনুকেও বোনের কাছে পাঠিয়েছিলেন তার বাবা মা। কিন্তু সেখানে এক বছর থেকে দেশে ফিরে আসে মাঈনু।
র্যাব অধিনায়ক বলেন, “মাঈনু উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবেরে ও নেশাগ্রস্থ হওয়ায় এবং পারিবারিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হওয়ায় জীবদ্দশায় শামসুল আলম মাস্টারও তার প্রতি বিরক্ত ছিলেন। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী জেসমিনও মেয়ের কাছে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। মাস কয়েক আগে জেসমিন ও তার মেয়ে দেশে ফেরেন।“
গ্রেপ্তারের পর মাঈনুকে নিয়ে র্যাব অভিযানে গিয়ে সাতকানিয়া এলাকার একটি গুদাম থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি উদ্ধার করে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
র্যাব অধিনায়ক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাঈনু জানিয়েছে, ওই পিস্তলটি তার বাবার অফিস থেকে সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। পিস্তলটির বৈধতা আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।