চট্টগ্রামে আয়োজনে রবি সৃষ্টির পুব-পশ্চিম মেলবন্ধন

বিশ্বকবির ৮১তম প্রয়াণ দিবসে তাকে স্মরণ করল প্রমা আবৃত্তি সংগঠন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2022, 06:09 PM
Updated : 8 August 2022, 06:09 PM

পশ্চিমের সুর আর পুবের বাণী, মেলবন্ধনে প্রকাশিত এক অন্য রবীন্দ্রনাথ- বিশ্বকবির ৮১তম প্রয়াণ দিবসে ‘পশ্চিমের রবি’ শিরোনামে ব্যতিক্রমী এক আয়োজন করল প্রমা আবৃত্তি সংগঠন।

সোমবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর থিয়েটার ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে গানে ও কথায় মুগ্ধ ছিলেন দর্শক-শ্রোতারা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সেইসময়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন বলেন, “উনবিংশ শতাব্দীতে বাঙালির জন্য পাশ্চাত্যের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। তার আগেও অবশ্য বহু বিদেশি বণিক এই বাংলায় এসেছিল। তখন বাংলা ছিল আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ কিন্তু শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে পিছিয়ে পড়েছিল।

“একটি পরাধীন দেশে রবীন্দ্রনাথের মত এক কবি, বহু ও বিচিত্রমুখী প্রতিভার জন্ম বিস্ময়কর। যে দেশ নানা শোষণের কারণে ধীরে ধীরে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে সেখানে বসে কী অসাধারণ কবিতা, নাটক, নৃত্যনাট্য তিনি রচনা করে চলেছেন। রবীন্দ্রনাথের গান মানুষের অন্তরের গভীরে প্রবেশ করে স্পর্শ করে। যারা বাঙালির জন্য পশ্চিমের দ্বার খুলে দিলেন তাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ অন্যতম প্রধান।”

অনুষ্ঠানে কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, “রবীন্দ্রনাথ কেবল পূর্বের বা পশ্চিমের কবি নন, তিনি পৃথিবীর কবি। রবীন্দ্রনাথ নানা উৎস থেকে তার সঙ্গীত ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার একটি হল পাশ্চাত্য সঙ্গীত। সেখান থেকে তিনি সুর গ্রহণ করেছেন।

“বিশ্বব্যাপী বাঙালির দৃষ্টি প্রসারিত করার ঘটনাটি ঘটেছিল সেই সময়ে। এরআগে প্রায় পাঁচ-ছ’শ বছর ধরে বাঙালি তার গন্ডির মধ্যে জীবন কাটিয়েছে। যাকে কুপমণ্ডুকতা বলে। সে জায়গা থেকে সমস্ত বিশ্বব্যাপী বাঙালির চোখ খুলে দেওয়ার কাজটি সবচেয়ে ভালোভাবে করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।”

অনুষ্ঠানে মূল ইংরেজি, আইরিশ ও স্কটিশ গানগুলো পরিবেশন করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী শিল্পী উর্বী মধুরা ও পূর্বা অধরা। আর এসব গানের অনুসরণে রচিত রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইমতিয়াজ আহমেদ।

ইংরেজ নাট্যকার বেন জনসনের ‘Drink to me only’ গানের সুর ও ভাব অবলম্বনে রচিত ‘কতবার ভেবেছিনু’ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পরিবেশনা।

১৭৯১ সালে স্কটিশ কবি বার্নসের ‘Ya Banks and Braes’ গানের আদলে ১৮৮২ সালে রবীন্দ্রনাথ লেখেন ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’ গানটি। আর সপ্তদশ শতক থেকে ইংল্যান্ডে প্রচলিত আইরিশ গান ‘The Vicer of Bray’ অবলম্বনে রচিত ‘ও দেখবি রে ভাই আয় রে ছুটে’।

জেন অস্টিনের উপন্যাসে ব্যবহৃত গান অনুসারে রচিত ‘সকলই ফুরালো, স্বপন প্রায়’ গানটি কালমৃগয়া নাটকে ছিল। আর ‘কালী কালী বলো রে আজ’ গানটি নাটক ব্যবহৃত হয় বাল্মিকী প্রতিভায়।

প্রেক্ষাপট জানিয়ে আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান বলেন, “বাংলায় প্রথম গীতি নাট্য বাল্মিকী প্রতিভা। এতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লোকগানের সাথে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের মিলন ঘটান। কালমৃগয়া গীতি নাট্যে আইরিশ, স্কটিশ ও ইংলিশ গানের সুর সরাসরি ব্যবহার করেন। এভাবে মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে বাইরের পৃথিবীতেও প্রকাশিত হন স্বতন্ত্র রবি।”

১৮৮০ সালে রবি ঠাকুর রচনা করেন ‘তবে আয় সবে আয়’। ইংরেজ কবি জন পিলের ‘দ্য ইংলিশ হান্টিং সং’ গানটির ভাব ও সুর গ্রহণ করা হয়েছে এতে।

বিখ্যাত আইরিশ কবি টমাস মুরের লেখা ‘Go Where glory waits thee’ অনুসারে ‘আহা আজি এ বসন্তে’ গানটি কবি রচনা করেন ১৮৮৮ সালে।

১৮৮৫ রবার্ট বানর্সের গানের কথা ও সুর অবলম্বনে কবিগুরুর রচিত ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পরিবেশনা।

গানের ফাঁকে কথামালায় শিল্পী রাশেদ হাসান বলেন, “পশ্চিমের শিল্প সাহিত্য দর্শন থেকে রবি যা গ্রহণ করেছিলেন, তা আমাদের নিজস্ব সম্ভারকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি সীমাকে অসীমের মাঝে নিতে চেয়েছেন। সৃষ্টিশীলতা নতুন আলোর রথে চাপিয়ে আমাদের নতুন জগতের সাথে সংযুক্ত করেছেন।

“আবার রবীন্দ্রনাথ পশ্চিমে প্রাচ্যের যে আলো বয়ে নিয়ে গেছেন, তার প্রমাণ পাই ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর রচনায়। পশ্চিম রবির কাছ থেকে কত যে পেয়েছে!”

যুক্তরাজ্য প্রবাসী শিল্পী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “রবীন্দ্রনাধ চিরকালীন ও প্রাসঙ্গিক হয়েই আছেন আজো।”