বিশ্বকবির গানের সুর-বাণীতে মুগ্ধতা ছড়ানো এক সন্ধ্যা

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক অজিত রায়ের গড়া সংগঠন অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গনের পঞ্চদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আয়োজন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2023, 07:01 PM
Updated : 6 May 2023, 07:01 PM

‘আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে/ তখন কে তুমি তা কে জানত। …তুমি ভোরের বেলা ডাক দিয়েছ কত, যেন আমার আপন সখার মত’ গানের সুরে পিনপতন নীরবতায় শ্রোতারা যেন প্রাণের বন্ধুরই সন্ধান করছিলেন।

শনিবার চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এমনই এক মন আকুল করা সন্ধ্যা কেটেছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের সুরে ও বাণীতে।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক অজিত রায়ের গড়া সংগঠন অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গনের পঞ্চদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজন করা হয় এ অনুষ্ঠানের।

‘প্রাণের বন্ধু, বুকের বন্ধু, সুখের বন্ধু দুখের বন্ধু…’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের প্রেম, প্রকৃতি ও পূজা পর্যায়ের গান পরিবেশন করেন সংগঠনের শিল্পীরা।

অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গনের পরিচালক শিল্পী শ্রেয়সী রায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ আয়োজনের কারণ তুলে ধরে বলেন, “যুদ্ধ, আগ্রাসন, হিংসা, দ্বেষ, হানাহানি, বিভেদ, বৈষম্য, গোঁড়ামি, প্রবাঞ্চনায় মানবতা আজ পর্যদুস্ত। শান্তি আর মৈত্রী সুদূর পরাহত। মানবতার এই সংকটে ও সংশয়ে রবীন্দ্র ভাবনা আজ অপরিহার্য।

“প্রেমের কবি রবীন্দ্রনাথ বিশ্বপ্রেম, বিশ্বধর্ম আর মানবধর্মের কথা বলেছেন। সকল ভেদাভেদ ও সংকীর্ণতার বোধের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন মানবাত্মার।”

‘তোমারি মধুর রূপে ভরেছ ভুবন/ মুগ্ধ নয়ন মম, পুলকিত মোহিত মন’- গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের পরিবেশনা।

এরপর শিল্পীরা একে একে গেয়ে শোনান ‘অন্তরে জাগিছো অন্তরযামী/তবু সদা দূরে ভ্রমিতেছি আমি’, ‘চির বন্ধু চির নির্ভর চিরশান্তি তুমি হে প্রভু’।

গানের মাঝে কথকতায় সূত্রধর বলেন, “যারে বলে ভালোবাসা, তারে বলে বন্ধু। জীবাত্মা আর পরমাত্মার এক নিবিড় সম্পর্ক। পরমাত্মাও চান নিঃস্বার্থ সমর্পণ। ভালোবেসে যে সমর্পণ, তাতেই কেবল পরমাত্মার সন্ধান মেলে। কবি নিজেই তা উপলব্দি করেছিলেন। সমর্পণই ছিল কবিগুরুর আরাধনা।” 

কীর্তন রাগে দাদরা তালে শিল্পীদের সমবেত পরিবেশনা, ‘কে বলেছে তোমায় বধু এত দুঃখ সইতে/ আপনি কেন এলে বধূ আমার বোঝা বইতে। প্রাণের বন্ধু, বুকের বন্ধু/ সুখের বন্ধু, দুখের বন্ধু’; প্রেম পর্যায়ের এই গান যেন সেই পরম বন্ধুকেই নিবেদন।

সূত্রধর বলেন, “বিশ্ব প্রভুর বিশালতার কাছে নিজের করুণ দৈন্য কি নিঃসহায় মনে হয়।”

এরপরই সুরে সুরে বেজে ওঠে ‘তুমি একলা ঘরে বসে কি সুর বাজালে’, ‘আজি যত তারা তব আকাশে’, ‘সংশয় তিমির মাঝে না হেরি গতি হে’ ও ‘আমারে তুমি অশেষ করেছো, এমন লীল তব’।

কবিগুরুর প্রেম পর্যায়ের গান ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা’ শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যায়। শেষে পূজা পর্যায়ের গান ‘শুধু তোমার বাণী নয় গো হে বন্ধু হে প্রিয়/ মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিও’ সুরের বিহ্বলতায় মোহিত করে দর্শকদের।

প্রয়াত শিল্পী মিহির নন্দীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা অনুষ্ঠানটির পরিবেশনা ও সামগ্রিক আয়োজনও মন কেড়েছে জানিয়ে চিত্রশিল্পী আলোকময় তলাপত্র বলেন, “সুরের সাথে একটি সুন্দর রাত কাটল। স্বার্থ আর হানাহানির ঊর্ধ্বে নিজেরে জানার যে অনুসন্ধান, মানুষের জীবনব্যাপী তারই বাণীরূপ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান। এই গান আমাদের সকলের জীবনানুভূতি এক সুরে বেঁধে দেয়।”