প্রীতিলতার ৯০তম আত্মাহুতি দিবস পালন

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার আত্মাহুতি নানা কর্মসূচিতে স্মরণ হয়েছে চট্টগ্রামে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2022, 03:45 PM
Updated : 24 Sept 2022, 03:45 PM

বীরকন্যা প্রীতিলতার ৯০তম আত্মাহুতি দিবসে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি আবারও উঠেছে।

আত্মাহুতি দিবসে শনিবার নগরীর পাহাড়তলীতে সে সময়ের ইউরোপিয়ান ক্লাবের অদূরে প্রীতিলতার আবক্ষ মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে আলোচনা সভা হয়।

বাসদ চট্টগ্রাম জেলা ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট পাহাড়তলিতে প্রীতিলতার ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।

এ সময় বাসদ নেতা আল কাদেরী জয় বলেন, “আজ এত বছর পরেও বিপ্লবীদের স্মৃতি সংরক্ষণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই্। পাঠ্যপুস্তকে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের বিপ্লবীদের জীবনী অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। এবং সব বিপ্লবীর স্মৃতি সংরক্ষণ করতে হবে।”

এদিকে পাহাড়তলীতে বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত পথসভা থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী সিঞ্চন ভৌমিক বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনে একই সূত্রে গাঁথা। বিপ্লবীদের পথধরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদেরকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ উপহার দিয়ে যান।

“কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, মুজিব শতর্বষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের কোনো সম্মান প্রদর্শন করা হয়নি। এমনকি প্রীতিলতার এই ভাস্কর্যটিও পর্যন্ত আলোকসজ্জা করা হয়নি।”

পথসভায় বক্তব্য রাখেন পরিষদের উপদেষ্টা শিক্ষক বিজয় শংকর চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক তপন ভট্টাচার্য্য, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের মিরাউদ্দিন ও ঋজু লক্ষী অবরোধ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের আহ্বায়ক হেলালউদ্দিন কবির ও সদস্য সচিব সজল শিকদার।

দস্তিদার পরিষদের দাবিগুলো হলো- চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের যুদ্ধক্ষেত্র জালালাবাদ পাহাড়টিকে বিপ্লবীদের স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করা, পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাবটি বিপ্লবীদের স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করা, দামপাড়া পুলিশ লাইনসে ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ব জাদুঘর’- এর নাম ‘চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহ ও পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ রাখা, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারের ফাঁসির মঞ্চে বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদারের নাম ও ম্যুরাল সংযুক্ত করা এবং ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল স্মরণে ‘চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহ দিবস’, ১৯৩৪ সালে ১২ জানুয়ারি বিপ্লবী মহানায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের ও বিপ্লবীনেতা তারকেশ্বর দস্তিদার এর ফাঁসি দিবস ও ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মাহুতি দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা।

এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নগরীর পাহাড়তলি ও পটিয়ার ধলঘাটে বীরকন্যার স্মরণে কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

মাস্টারদা সূর্য সেনের নির্দেশে তার অন্যতম সহযোগী প্রীতিলতার নেতৃত্বে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলির ‘ইউরোপিয়ান ক্লাবে’ হামলা হয়।

আট জন বিপ্লবীর ওই অভিযানে বেশ কয়েকজন ইংরেজ হতাহত হন। সবাই ফিরে এলেও আহত প্রীতিলতা ব্রিটিশ সেনাদের গ্রেপ্তার এড়াতে নিজের কাছে রাখা ‘পটাসিয়াম সায়ানাইড’ খেয়ে আত্মাহুতি দেন।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ মে পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জগৎবন্ধু তৎকালীন মিউনিসিপ্যাল কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন এবং মা প্রতিভাময়ী ছিলেন গৃহিণী।

প্রীতিলতা চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর স্কুল, ঢাকার ইডেন কলেজ ও কলকাতার বেথুন কলেজে লেখাপড়া করেন। চট্টগ্রামের অর্পনাচরণ (নন্দনকানন স্কুল) বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকারও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।