নগরীর নিউ মার্কেট, আগ্রাবাদ ও পটিয়া উপজেলায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
Published : 04 Aug 2024, 08:11 PM
সরকার পতনের এক দাবিতে ডাকা অসহযোগের প্রথম দিন চট্টগ্রামে আন্দোলনকারী, পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।
রোববার নগরীর নিউ মার্কেট, আগ্রাবাদ ও পটিয়া উপজেলায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সকালে এক দফা দাবিতে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
পরে দুপুরে পটিয়া উপজেলা এবং বিকালে নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সমর্থনে এবং সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী (বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রীর বাসভবন) ও সিটি মেয়র রেজাউল করিমের বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে রোববার বেলা একটায় নিউ মার্কেট মোড়ে সমাবেশের ডাক দেয় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।
আর বেলা আড়াইটায় একই স্থানে সমাবেশের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
পরে অন্দোলনকারীরা তাদের সমাবেশের সময় পাল্টে নির্ধারণ করে ১১টায়। পরে একই সময়ে আওয়ামী লীগও সমাবেশের ঘোষণা দেয়।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নিউ মার্কেট মোড় নিয়ন্ত্রণে নেওয়া আন্দোলনকারীরা পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের সামনে টিকতে না পেরে বেলা ১২টার দিকে নিউ মার্কেট মোড় ছেড়ে দেয়। পরে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করে পিটুনি দেয় সরকারদলীয় লোকজন।
এসময় নিউ মার্কেট এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অন্তত ৩০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আহতের মধ্যে ১২-১৩ জন ছররা গুলিতে আহত বলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন জানিয়েছেন।
এরপর আরও অনেককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
রোববার সকাল ১১টায় আন্দোলনকারীদের সমাবেশের ঘোষণা থাকলেও আগে সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকেই তোরা নিউ মার্কেট মোড় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলে। আমতল, জিপিও, স্টেশন রোড এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। বিক্ষোভে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চেয়ে সরকার বিরোধী লোকজনের বেশি উপস্থিতি দেখা যায়।
আন্দোলনকারীদেরকে এসময় আশপাশে দোকাপাট বন্ধ করতে বাধ্য করতে দেখা যায়। এসময় রেয়াজউদ্দিন বাজারের বিভিন্ন দোকান কর্মচারীরাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন।
পরবর্তীতে তারা ব্যারিকেড বাড়িয়ে তিনপুল পর্যন্ত করে ফেলে। এসময় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে তাদের সমর্থক ছাড়া অন্যদের সেখানে অবস্থান করতেও নিষেধ করতে দেখা যায়।
সোয়া ১১টার দিকে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়, যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়।
পুলিশের সাঁজোয়া যান নিয়ে আমতলের দিকে চলে আসে। বিক্ষোভকারীরা এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও ছোড়ে।
এর মধ্যে নিউ মার্কেট মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা অবস্থান নেন। আর আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে জুবিলি রোড, স্টেশন রোড ও কোতোয়ালীর দিকে চলে যায়। বিভিন্ন জন আশপাশের বিভিন্ন মার্কেটে আটকা পড়েন।
এসময় বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়া আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরাও তাদের ধাওয়া করে এবং তাদের সাথে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের পিটুনি দেয়ারও ঘটনা ঘটে।
নগরীর জুবিলি রোড, স্টেশন রোড এবং কদমতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
এদিকে আন্দোলনকারী ও সরকার দলীয় সমর্থকদের হাতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক লাঞ্চিত ও মারধরের শিকার হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ অফিসে ভাংচুর
এদিকে আন্দোলনকারীরা ধাওয়া খেয়ে চলে যাওয়ার সময় লালদিঘী মাঠ সংলগ্ন জেলা পরিষদ মার্কেটের কাছে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে সেখান থেকে চলে যাওয়ার পথে দুপুরে লালদিঘী মোড়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীরা লালদিঘী মোড়ের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে ঢুকে ভাংচুর চালায়। এক পর্যায়ে সেখান থেকে চেয়ার টেবিল এনে কার্যালয়ের বাইরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
‘রণক্ষেত্র’ পটিয়া
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল থেকে উপজেলা পরিষদ এলাকায় সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। এসময় পটিয়া আল জামিয়া আল ইসলামীয় মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বের হয়ে আসে কোটা আন্দোলনকারীদের সমর্থনে।
মিছিল নিয়ে আসা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। পরে তারা পুনরায় সংগঠিত হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ধাওয়া করে। উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে গুলিরও ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
পরে সড়কের আশপাশে থাকা অন্তত ১৫টি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ এবং বেশকিছু যানবাহন ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এসময় সড়কে কোনো পুলিশ দেখা যায়নি বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
বিকালের পর উত্তপ্ত আগ্রাবাদ
এদিকে বিকালে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় পুনরায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ফাঁকা গুলি, কাঁদুনে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে আন্দোলনকারীরা ঢিল ছুড়ে জবাব দেয়।
বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর
এদিকে দুপুরের পর থেকে নগরীর নাসিমন ভবনে নগর বিএনপি কার্যালয়ে তিন দফা ভাঙচুর হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ইদ্রিস আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেলা ১টা থেকে ২টার মধ্যে দুই দফায় বিএনপি কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর বিকাল ৫টার দিকে পুনরায় ভাঙচুর করা হয়।
ইদ্রিস আলী জানান, কার্যালয়ের কলাবসিবল গেইট ভেঙ্গে অফিসে প্রবেশের পর জানালার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। সেখানে কার্যালয়ের সামনে থাকা ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
হামলার জন্য বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগকর্মীদের দায়ী করেন এবং পুলিশের নির্লিপ্ততার নিন্দা জানিয়েছেন।