চট্টগ্রামে মেট্রোরেল: সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অগ্রগতি জানলেন মেয়র

চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণে আগ্রহী চীনা প্রতিষ্ঠান সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে তাদের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজের অগ্রগতি জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2022, 05:52 PM
Updated : 8 June 2022, 05:52 PM

বুধবার চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকশন কোম্পানি (সিআরসিসি)-১৯ ও ডব্লিউআইইটিসি জেভি-র প্রতিনিধি দল সিটি মেয়রের সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা কালাম চৌধুরী সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “মেয়র নগরীর সৌন্দর্য্য অক্ষুণ্ন রেখে এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে বন্দরনগরীর ভূগর্ভে রেললাইন স্থাপনে গুরুত্ব দিয়ে সমীক্ষা কাজ পরিচালনা করতে প্রতিনিধি দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সিটি মেয়র রেজাউল বলেন, “চট্টগ্রাম নগরীতে মেট্রোরেল স্থাপন সময়ের দাবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নে নানা ধরণের প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে মেট্রোরেল স্থাপন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

“চট্টগ্রাম শহরে জন ও পরিবেশবান্ধব গণপরিবহণ ব্যবস্থা আমাদের গড়ে তুলতে হবে। এখানে সড়ক, ফ্লাইওভার, ওভারপাস, ব্রিজ, টানেল আছে। এগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে জনগণের চলাচল সহজ করা আমাদের মূল উদ্দেশ্য।”

তিনি প্রতিনিধি দলকে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে একটি প্রোফাইল প্রস্তুত করতে বলেন এবং প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

প্রতিনিধি দলের নেতা সিআরসিসি-১৯ ও ডব্লিউ আইইটিসি জেভি এর পরিচালক হু চাউ বলেন, “মেট্রোরেল নির্মাণ নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা এরইমধ্যে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করেছি। এ কাজে সিসিসি’র সহযোগিতা কামনা করছি।”

সভায় উপস্থিত সিসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিআরসিসি আগেই আমাদের কাছে প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। জানুয়ারিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সিআরসিসি তাদের প্রস্তাব উপস্থাপন করে।

“এরপর মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের এমওইউ সই হয়েছে। এক বছরের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। তিন মাস পেরিয়ে গেছে। তারা কিছু থিওরিটিক্যাল ও ফিজিক্যাল কাজ করেছে বলে সভায় জানিয়েছে। এক মাস পর আবার অগ্রগতি জানাবে।”

বুধবারের সভায় সিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাসেম, প্রতিনিধি দলের লি ম্যাং, দি মিং ডং, স্থানীয় এজেন্ট আবিদ রহমান তানবির ও মো. সরোয়ার উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে ১৩ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে বন্দরনগরীতে মেট্রোরেল নির্মাণ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।

ওই সভায় সিআরসিসি চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণ নিয়ে তাদের প্রস্তাব তুলে ধরে।

এ বছর ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেকে) সভায় ঢাকার পর চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণের নির্দেশ দেন।

এরআগে ২০২১ সালের মে মাসে সিআরসিসিএল বন্দর নগরীতে মেট্রোরেল ও মনোরেল নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাব নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে এসেছিল।

২০১৬ সালে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সাইনোহাইড্রো ব্যুরো অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তারা মেট্রোরেল নির্মাণের প্রস্তাব দেয় সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে। তারা তখন জানিয়েছিল ৫ বছরের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব।

চট্টগ্রামের মেট্রোরেল প্রকল্প নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়াও আগ্রহী। উন্নয়ন সংস্থা কোইকার মাধ্যমে এ প্রকল্পের প্রাকসম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে তারা। এ কাজে তারা ৫ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবেও দিতে চায়।

চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে এ বিষয়ে এক বৈঠকে কোইকা প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ওই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি চীনের কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি যৌথভাবে নিজেদের খরচে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের একটি প্রস্তাব দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ)। বিনিময়ে মীরসরাইয়ের কাছে সাগর থেকে উদ্ধার করা ৬০ বর্গ কিলোমিটার জমিতে তারা একটি স্মার্ট সিটি বানিয়ে সেখান থেকে লভ্যাংশ নেওয়ার প্রস্তাব করে।

পাশাপাশি মেট্রোরেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইও নিজেদের খরচে করার প্রস্তাবও দেয় চীনা কোম্পানিগুলো।

সিডিএ প্রস্তাবের বিষয়টি জানানোর পর, ২২ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর সুপারিশ করে।

এরপর ২ মার্চ সিউলে বাংলাদেশ-কোরিয়া যৌথ পিপিপি প্ল্যাটফরমের চতুর্থ সভায় চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে দক্ষিণ কোরিয়া।