পরিবহনের ভোগান্তি চট্টগ্রামে, দোকান খুলতে চান ব্যবসায়ীরা

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রুখতে লকডাউন শুরু হলেও তা মানতে অনীহা দেখা গেছে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2021, 05:22 PM
Updated : 5 April 2021, 05:22 PM

লকডাউন শুরুর প্রথমদিন সোমবার গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্রাক, কভার্ড ভ্যান চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক দেখা গেছে বন্দরনগরীতে। 

এবারের লকডাউনে অফিস-আদালত, পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় রাস্তায় বিপুল মানুষের চলাচল ছিল সকাল থেকেই। কিন্তু গণপরিবহন না থাকায় কর্মস্থলে যাওয়া-আসায় লোকজনকে পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। অনেকে রিকশা বা পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে গেলেও কেউ কেউ ঘণ্টা পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন।

এক সপ্তাহের লকডাউনের প্রথম দিন সোমবার সুনসান চট্টগ্রামের কদমতলী বাস স্টেশন। ছবি: সুমন বাবু

এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, “সকাল সোয়া ছয়টায় বাসা থেকে বের হয়েছি আটটার অফিস ধরতে। কিন্তু সোয়া সাতটা পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ি না পায়ে কিছু দূর রিকশায় আর বাকি পথ মোটর সাইকেলে করে অফিসে পৌঁছেছি পৌনে নয়টায়।

“সরকারের পক্ষ থেকে কারখানা মালিকদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা চালু করার কথা বলা হলেও বেশিরভাগ কারখানা তা করেনি। যাদের নিজস্ব গাড়ি আছে তারা ভালোভাবে যেতে পারলেও অন্যদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।”

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই বন্ধ চট্টগ্রামের বিপণী বিতান। ছবি: সুমন বাবু

বেলা বাড়ার সাথে সাথে সড়কে কিছু কিছু অটোরিকশা, টেম্পু, বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। গণপরিবহনে ছিল না সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই। বাস, অটো, টেম্পুতে ওঠার জন্য যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।

মোটর সাইকেলে রাইড শেয়ারিং বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলেও নিউ মার্কেট, আন্দরকিল্লা, আমতল মোড়ে কয়েকজন মোটরসাইকেল চালককে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।

শাহ আমানত মার্কেট এলাকায় মোটর সাইকেল নিয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন রাশেদুল ইসলাম।

নির্দেশনা না মেনে যাত্রী পরিবহনে কেন অপেক্ষা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পেট চালাতে না পারলে জীবন দিয়ে কী হবে? আক্রান্ত হওয়ার ভয় নিয়েও জীবিকার তাগিদে বের হয়েছি।”

লকডাউন প্রত্যাহার ও সীমিত সময়ের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট এলাকায় মালিক-শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: সুমন বাবু

সড়ক  আটকে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ

লকডাউনের বিরোধিতায় বিকালে নগরীর আমতল এলাকায় সড়ক আটকে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। ‘লকডাউন মানি না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করব’ স্লোগান দিয়ে তারা রাস্তায় সমাবেশ ও মিছিল করেন।

তামাকমুন্ডি লেইন বণিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন,  “গত বছর টানা কয়েক মাস ব্যবসা বন্ধ ছিল। এবার সে ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু হঠাৎ করে লকডাউন দেওয়ায় আমাদের আবার পথে বসতে হবে।”

উদ্বেগ জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, “সারা বছরের ব্যবসা হয় রোজা ও ঈদের আগে। অনেকে দোকানে মালামাল তুলেছে। এ মুহূর্তে আবার লকডাউন… যেখানে জীবিকা নাই সেখানে জীবন দিয়ে কী হবে?”

লকডাউন প্রত্যাহার ও সীমিত সময়ের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট এলাকায় মালিক-শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: সুমন বাবু

অন্তত সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করার সুযোগ দাবি করেন তামাকমুন্ডি লেইন তিনি।

সমাবেশে অংশ নেওয়া আরেক ব্যবসায়ী তারেকুল ইসলাম বলেন, গত বছর বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের বোঝা এখনও টানতে হচ্ছে। এবারও কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন।

তিনি বলেন, “ব্যবসা বন্ধ থাকলেও ব্যাংক ঋণ তো মওকুফ হবে না। সেগুলো তো পরিশোধ করতে হবে। পরপর দুই বছর ঈদের আগে ব্যবসা করতে না পারলে আমাদের পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় নাই।”