হাসপাতালে রোগী কম কেন, প্রশ্ন সুজনের

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) পরিচালিত একটি হাসপাতালে গিয়ে কম রোগী দেখে ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2020, 11:45 AM
Updated : 5 Sept 2020, 11:45 AM

শনিবার দুপুরে আকস্মিক নগরীর উত্তর কাট্টলীতে মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল পরিদর্শনে যান তিনি।

এ সময় সেখানকার চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশে সুজন বলেন, “এক সময় সিটি করপোরেশনের মেটারনিটি হাসপাতালগুলো প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদানে নগরবাসীর আস্থা অর্জন করেছিল এবং সারা বছরই প্রসূতি মায়েদের ভিড় লেগেই থাকত।

“আমি দেখেছি অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে সেবা নিতে আসতেন। সর্বোপরি চিকিৎসা ব্যবস্থার দক্ষতা ও সক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। পরবর্তীতে নানা কারণে সে সুনাম আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।”

সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময়ে নগরীর সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সিসিসির অধীনে মাতৃসদন হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।

সে সময় প্রসুতি মা ও শিশু সেবার জন্য হাসপাতালগুলো ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়। পরে ধীরে ধীরে এসব হাসপাতালের সেবার মানে আস্থা হারায় নগরবাসী।

প্রশাসক সুজন বলেন, “হাসপাতালগুলোর সেবার মান অবনতিশীল হওয়ায় রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন না। অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্যসেবার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।

“বিশেষ করে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ ও নিশ্চিত করতে যে লক্ষ্য, পরিকল্পনা ও দায়বদ্ধতা থাকা উচিত তা করতে না পারলে ভাবমূর্তির সংকট তৈরি হয়। এই সংকটে যাতে পড়তে না হয় তার জন্য সকলকে শতভাগ পেশাগত দায়বদ্ধতা নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন তিনজন। হাসপাতালটি ৫০ শয্যার।

সেখানে প্রসুতি মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা এবং স্বাভাবিক ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ‘ডেলিভারির’ ব্যবস্থা আছে। ওই হাসপাতালে একজন কনসালট্যান্টসহ মোট ১২ জন চিকিৎসক কর্মরত। হাসপাতালটির বর্হির্বিভাগেও সেবা দেওয়া হয়।

পরিদর্শনের সময় সুজন বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে সুসংহত চাকুরিবিধি ও প্রবিধান না থাকায় অভিজ্ঞ ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এখানে চাকুরি করতে আগ্রহী নন। একজন ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীর যে সম্মানজনক বেতন কাঠামো থাকা দরকার তা অবশ্যই হবে এবং মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে শীঘ্রই প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে আশা করছি। তখন সিটি করপোরেশনে দক্ষ জনবল নিয়োগে কোনো বাধা থাকবে না।”

পরিদর্শনকালে প্রশাসক হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের খোঁজ খবর নিয়ে তাদের সাথে কথা বলেন এবং সেবা পেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চান।

ঝটিকা পরিদর্শন অব্যাহত থাকবে জানিয়ে সুজন বলেন, “রাত কিংবা দিনে আমি হাসপাতাল ভিজিট করব। এতে কোনে অনিয়ম, দুর্নীতি কিংবা রোগী সেবা বঞ্চিতের অভিযোগ আমলে নিয়ে কর্তব্যরতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সিসিসি পরিচালিত হাসপাতালগুলোর বিষয়ে যে কোনো অভিযোগ বা পরামর্শ আমলে নেওয়া ঘোষণা দেন তিনি।

এ সময় প্রশাসক হাসপাতালের রেজিস্টার, হাজিরা, ওষুধপত্র ও মালামাল স্টোরের খোঁজ-খবর নেন এবং হাসপাতালের সার্বিক পরিস্থিতি ও আয়-ব্যয় হিসাব দাখিলের নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি হাসপাতালের বিভিন্ন চাহিদা পূরণের আশ্বাস দেন।

সিসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে চারটি মাতৃসদন, একটি জেনারেল হাসপাতাল, ৫৫টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কয়েকটি হোমিওপ্যাথি দাতব্য চিকিৎসালয় এবং স্যাটেলাইট ক্লিনিক আছে। এই বিভাগের অধীনে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৮০০।